দিল্লি সরকারের মোট ৩৩টি দফতরের মধ্যে ১৮টি ছিল মণীশ সিসোদিয়ার হাতে। দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা, অর্থ, স্বাস্থ্য, আবগারির মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর সামলাতেন সিসোদিয়া। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সবচেয়ে বিশ্বাসভাজন নেতা তিনি। তবে এবার তিনি আবগারি কেলেঙ্কারি মামলায় জেলে। এই আবহে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ভাবে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে চলেছে কেজরিওয়াল। এর আগে তাঁর মন্ত্রিসভার আরও এক সদস্য - সত্যেন্দ জৈন গ্রেফতার হয়েছিলেন হাওয়ালা কাণ্ডে। এবার নিজের বাহিনীর 'সেনাপতি'কে হারালেন কেজরি। (আরও পড়ুন: মাধ্যমিক পরীক্ষার মাঝে চরম সিদ্ধান্ত, ডিএ-র দাবিতে ফের কর্মবিরতি সরকারি কর্মীদের)
উল্লেখ্য, মণীশ সিসোদিয়ার 'শিক্ষা মডেল' গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে। মূলত এই 'শিক্ষা মডেল'কে হাতিয়ার করেই দেশে নিজেদের বিস্তার ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিল আম আজমি পার্টি। তবে শিক্ষামন্ত্রী নিজেই যখন জেলে চলে গিয়েছেন, তখন রাজনৈতিক ভাবে এখন 'প্ল্যান বি'-র শরণাপন্ন হতে হবে কেজরিকে। এদিকে প্রশাসনিক ভাবে কেজরিওয়ালের এখন সবথেকে বড় করণীয় হল সময় মতো দিল্লির বাজেট পেশ করা এবং সিসোদিয়ার কাজ সামলানোর জন্য এক বা একাধিক যোগ্য ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা। এদিকে জানা যাচ্ছে সিসোদিয়ার অবর্তমানে রাজস্ব দিল্লির মন্ত্রী কৈলাশ গেহলট আগামী অর্থবছরের জন্য দিল্লি সরকারের বাজেট পেশ করতে পারেন। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে দিল্লিতে আম আদমি পার্টির সরকার গঠনের পর থেকে বাজেট পেশ করে এসেছেন সিসোদিয়াই। এই প্রথম তিনি বাজেট পেশ করবেন না।
দিল্লি সরকারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গণপূর্ত বিভাগ (PWD), পরিষেবা, অর্থ, বিদ্যুৎ, স্বরাষ্ট্র এবং নগর উন্নয়ন সহ ১৮টি দফতরের দেখাশোনা করেন সিসোদিয়া। তাছাড়া অন্য যেসব দফতরের দায়িত্বে কোনও মন্ত্রীকে নিযুক্ত করা হয়নি, তারও দেখভাল করেন মণীশ সিসোদিয়া। প্রসঙ্গত, কেজরিওয়াল ছাড়াও দিল্লি সরকারের ছয়জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী রয়েছেন। যার মধ্যে সত্যেন্দ্র জৈন আগের থেকেই জেলে রয়েছেন। তিনি এখন দফতর বিহীন মন্ত্রী। সত্যেন্দ্র জৈনকে অর্থ পাচারের মামলায় গত বছর এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট গ্রেফতার করেছিল। আর এবার আবগারি দুর্নীতি মামলায় সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হলেন কেজরির ডেপুটি। যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার অঙ্গীকার নিয়ে আম আদমি পার্টি গঠন হয়েছিল, ধীরে ধীরে সেই দুর্নীতির চোরাবালিতেই ডুবছে কেজরির দলের পা।
এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, কেজরিওয়াল আগামী মাসে কর্ণাটক, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিনি ভিনরাজ্যে যেখানেই যান, তাঁর সঙ্গী হতেন মণীশ সিসোদিয়া। আম আদমি পার্টির 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' যেন তিনিই। তবে এহেন সেনাপতিকে হারিয়ে ভারত জয়ের যুদ্ধে কী একা নামতে পারবেন কেজরিওয়াল? নাকি মণীশের গ্রেফতারি থেকে সহানুভূতি কুড়িয়ে এগিয়ে যাবে আম আদমি পার্টি? এই সব প্রশ্নের জবাব মিলবে সঠিক সময়ে। আপাতত মণীশ সিসোদিয়ার গ্রেফতারির প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শনের কর্মসূচি পালন করার ডাক দিয়ে আপ। কেজরিওয়াল চাইবেন নিজেদের 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার' হিসেবে তুলে ধরতে।