এক পরিবারের পাঁচ সদস্যকে হত্যার অভিযোগে ৫০ বছর বয়েসি এক মহিলা-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করল ঝাড়খণ্ড পুলিশ। গোয়েন্দাদের দাবি, এর জেরে মঙ্গলবার নদীর তীর থেকে উদ্ধার করা পাঁচটি কঙ্কালের রহস্য সমাধান হল।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ১৮ জুলাই ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার টন্টো থানার অন্তর্গত বাইহাটু গ্রামে এক পরিবারের ৫ সদস্যকে হত্যা করা হয়। গত মঙ্গলবার গ্রাম থেকে ২০ কিমি দূরে নগীর চর থেকে উদ্ধার করা হয় নিহত দুই প্রাপ্তবয়স্ক ও তিন নাবালকের কঙ্কাল।
পুলিশের দাবি, নিহত কাইরা লাগুরি, তাঁর স্ত্রী টুরি ওরফে মেনজো লাগুরি এবং তাঁদের তিন সন্তান বীর সিং লাগুরি, পুটলি লাগুরি ও নামালুম লাগুরিকে খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী কাইরার ৫০ বছর বয়েসি পিসি টুরি লাগুরি। হত্যাকাণ্ড ঘটাতে তিনি বাকি নয় জনকে উসকান। মূল উদ্দেশ্য ছিল বাইহাটু গ্রামে কাইরার জমি দখল করা।
নিহত কাইরার আর এক পিসি নানিকা হেসা ১৬ সেপ্টেম্বর টন্টো থানায় অভিযোগ করেন যে, গত ১৩ জুলাই থেকে কাইরা, তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তান নিখোঁজ হয়েছেন বলে অভিযোগ দায়ের করেন। এর পর ২৬ সেপ্টেম্বর পশ্চিম সিংভূম জেলার পুলিশ সুপারের কাছে এই বিষয়ে আরও একটি অভিযোগ জমা দেওয়ার পরে পায়ে হেঁটে রাঁচিতে মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের সঙ্গে গত ১৭ নভেম্বর দেখা করেন। তাঁকে কোনও রকমে বুঝিয়ে খুন্তপানিতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন জগন্নাথপুরের এসডিপিও প্রদীপ ওরাঁও।
পশ্চিম সিংভূমের পুলিশ সুপার অজয় কিন্ডা জানিয়েছেন, ‘ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করার পরে তাদের জেরায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার নগডাবুরুগাডা নদীর তীরে পাঁচটি কঙ্কাল উদ্ধার করে জগন্নাথপুরের এসডিপিও-র নেতৃত্বে এক বিশেষ তদন্তকারী দল।জেরায় ওই দশ অভিযুক্ত নিজেদের অপরাধের কথা কবুল করেছে। টুরি লাগুরির পরিকল্পনায় ১৮ জুলাই রাতে তাদের বাড়ির ভিতরে সপরিবারে খুন করা হয় কাইরা লাগুরিকে। তাদের দেহগুলি নদীর চরে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আধপোড়া দেহগুলি এর পর মাটি খুঁড়ে পুঁতে দেওয়া হয়। কাইরার জমি হাতানোর উদ্দেশেই এই হত্যাকাণ্ডের ছক কষেন কাইরার পিসি টুরি লাগুরি।’
জগন্নাথপুরের এসডিপিও প্রদীপ ওরাঁও জানিয়েছেন, ঘটনার প্রায় কোন প্রমাণ না পাওয়ায় ব্যাপক হারে প্রযুক্তিনির্ভর অনুসন্ধানের সাহায্য নিতে হয়েছে পুলিশকে। এ ছাড়, লাগাতার জেরাতেও উঠে আসে নানান তথ্য।
নিহতদের আত্মীয়দের কয়েকজন জানিয়েছিলেন, রোজগারের সন্ধানে সপরিবারে ওড়িশায় গিয়েছেন কাইরা। কিন্তু ওড়িশায় তদন্তের ফল এবং সেখানে বসবাসকারী ওই পরিবারের আত্মীয়দের জেরার পরেও কোনও সমাধান মেলেনি। কাইরার মোবাইল কল রেকর্ড যাচাই করে দেখা গিয়েছে, ২২ মার্চের পরে ফোনটি ব্যবহারই করা হয়নি। এরপর মোবাইল ট্র্যাক করে জনৈক সামু গাগরাইকে খুঁজে পাওয়া যায়, যাঁর হেফাজতেই ছিল কাইরার ফোন।
সামুকে দেরা করতেই ফাঁস হয় আসল রহস্য। নিজের দোষও সে স্বীকার করেছে পুলিশের কাছে। সেই সূত্র ধরেই গ্রেফতার করা হয় বাকি নয় অভিযুক্তকে।