ভালো খেলেও জয় অধরা থাকছে ইস্টবেঙ্গল এফসি-র। কিছু ছোট ছোট ভুল করে বসার কারণেই জিততে পারছে না লাল-হলুদ ব্রিগেড। এমনটাই মনে করেন দলের হেড কোচ স্টিফেন কনস্ট্যান্টাইন। তাঁর মতে, দলের ফুটবলাররা যতক্ষণ না ভুল করছেন, ততক্ষণ লাল-হলুদকে হারানো কঠিন। আর অনুশীলনে সেই ভুল শোধরানোরই চেষ্টা করে চলেছে কনস্ট্যান্টাইন। শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে সুনীল ছেত্রী, রয় কৃষ্ণদের বিরুদ্ধে খেলতে নামছে ইস্টবেঙ্গল।
বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে নিজেদের প্রস্তুতি ও দলের মানসিকতা নিয়ে সাংবাদিকদের আর কী কী বললেন কনস্ট্যান্টাইন, দেখে নিন এক নজরে-
প্রশ্ন: অ্যালেক্স লিমার কী অবস্থা?
কনস্ট্যান্টাইন: অ্যালেক্সের হ্যামস্ট্রিং সমস্যা রয়েছে। ক্রমশ সেরে উঠছে। গতকাল ফিজিও এবং রিহ্যাব কোচের সঙ্গে বাড়তি কিছু ট্রেনিং করেছে। আজ আবার করবে। আপাতত এই অবস্থা।
প্রশ্ন: শৌভিক চক্রবর্তী, অনিকেত যাদবেরও তো চোট লেগেছে বলে শোনা যাচ্ছে। এই ব্যাপারে কিছু বলবেন?
কনস্ট্যান্টাইন: অনিকেতের জ্বর। তাই কাল ও অনুশীলন করতে পারেনি। শৌভিক হাসপাতালে। সোমবার ওকে দেখতে গিয়েছিলাম। ওর ডেঙ্গি হয়েছে। সুতরাং ওকে এখন কয়েক দিন পাওয়া যাবে না। হয়তো আজই ছাড়া পেয়ে যাবে। আশা করি ও দ্রুত সেরে উঠবে এবং মাঠে ফিরে আসবে।
প্রশ্ন: তা হলে কি বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে প্রথম এগারো নামানোও কঠিন আপনার পক্ষে?
কনস্ট্যান্টাইন: এত নেতিবাচক হওয়ার কারণ নেই। কিছু কিছু ব্যাপার আছে, যেগুলি আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এ জন্যই ২৪-২৫ জন খেলোয়াড়কে রাখা হয় দলে। শুধু বেঙ্গালুরু নয়, সব ম্যাচই আমাদের কাছে কঠিন। যে খেলোয়াড়রা হাতে রয়েছে, তারাই মাঠে নামবে।
আরও পড়ুন: শেষ মুহূর্তে গোল করে নায়ক শুভশিস,৩ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লাফ বাগানের
প্রশ্ন: বেঙ্গালুরু এফসি দল সম্পর্কে কী বলবেন?
কনস্ট্যান্টাইন: ওরা বড় বাজেটের দল। ওদের একটা সেট দল রয়েছে। ওদের কোচ নতুন। কিন্তু ওঁর ভাল অভিজ্ঞতা আছে। আইএসএলের সব দলের মতোই ওরাও যথেষ্ট ভাল দল। এই লিগে কোনও সহজ ম্যাচ হয় না। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে ম্যাচটা মোটেই সোজা ছিল না। আমরা জেতার পরে সবাই আশ্বস্ত হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু প্রথমার্ধে ওদের একটা শট ক্রসবারে লাগে। কমলজিৎ দারুণ সেভ করেছিল। কিন্তু সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেনি কেউ। ৩-১-এর স্কোর দেখে মনে হতে পারে, ম্যাচটা সহজেই জিতেছি আমরা। কিন্তু এর পিছনে অনেক পরিশ্রম আছে। আমাদের এই দলটার মধ্যে ফাইটিং স্পিরিট আছে। কোনও দলের পক্ষেই টানা কুড়িটা ম্যাচ জেতা সম্ভব না। আমাদের পক্ষেও নয়। কারণ, আমরা নতুন দল। আমরা ভবিষ্যতের কথা ভেবে এগোচ্ছি। দলের ছেলেরা প্রতি ম্যাচেই নিজেদের উজাড় করে দিয়েছে। সবার মতো আমরাও ভুল করেছি। তবে খেলোয়াড়দের মানসিকতা নিয়ে আমি খুশি। এর চেয়ে বেশি আর কী চাই? ভুলের সংখ্যা কমানো প্রয়োজন।
প্রশ্ন: সুনীল ছেত্রীর মতো খেলোয়াড়দের জন্য কোনও বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে আপনার?
কনস্ট্যান্টাইন: প্রত্যেক দলের জন্যই আলাদা আলাদা পরিকল্পনা থাকে। প্রতিপক্ষকে নিয়ে আমরা চর্চা করেছি। ওরা কী কী করতে পারে, সেটাও আমরা জানি। কী করে ওদের আটকাব, সেটাই আসল প্রশ্ন। আমাদেরও ভালো খেলতে হবে। আমরা দলে বা খেলায় খুব বেশি কিছু পরিবর্তন আনার পক্ষপাতী নই। অন্যরা আমাদের জন্য নিজেদের পাল্টাক। পরের সপ্তাহে যেমন আমাদের ম্যাচ ওড়িশার বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচের জন্য প্রস্তুতির একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে।
প্রশ্ন: ঘরের মাঠে আপনারা একটাও ম্যাচ জিততে পারেননি। যেটা জিতেছেন, সেটা অ্যাওয়ে ম্যাচে। আবার একটা অ্যাওয়ে ম্যাচে খেলতে যাচ্ছেন আপনারা। এই ম্যাচে কি জয়ের আশা আছে বলে মনে করেন?
কনস্ট্যান্টাইন: আমরা তো সব মিলিয়ে দুটো ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলেছি। তার মধ্যে একটাও জিততে পারিনি। নর্থইস্টের বিরুদ্ধে জেতার পরে হেডলাইন হয়, অবশেষে আমরা জয় পেলাম। সেটা ছিল আমাদের তৃতীয় ম্যাচ। এমন নয় যে, টানা দশটা বা পনেরোটা ম্যাচে আমরা জিততে পারিনি। মাত্র পাঁচটা ম্যাচের মধ্যে একটাতে জিতেছি আমরা। ঘরের মাঠ হোক বা বাইরের, আমার কাছে জয়-জয়ই। বেঙ্গালুরুতে যাচ্ছি ম্যাচ জিততে। চেন্নাইয়েও সেই উদ্দেশ্য নিয়েই গিয়েছিলাম। এত প্রস্তুতি, এত বিশ্লেষণ, আলোচনা- এ সব হারার জন্য নয়। আমরা জিততেই চাই। তাই বলে সব ম্যাচে জেতা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। হয়তো বছর দুয়েক পরে সেটা সম্ভব হবে। আর্সেন ওয়েঙ্গারের মতো কোচও প্রথম মরসুমে সব ম্যাচ জিততে পারেনি। আমরা যতক্ষণ না নিজেরা ভুল করছি, ততক্ষণ আমাদের হারানো কঠিন। চেন্নাইনের বিরুদ্ধে আমরাই নিজেদের হারিয়েছি। এটা বন্ধ করতে হবে। আমাদের শিখতে হবে, কী করে জিততে হবে। কী করে হারতে হবে, তা নয়।
আরও পড়ুন: ২ বার পিছিয়ে পড়েও সমতা ফেরানো,ড্র ম্যাচে নৈতিক জয় ১০জনের বাগানেরই
প্রশ্ন: কিন্তু প্রতিপক্ষের ভুলগুলি আপনারা কাজে লাগাতে পারছেন না কেন?
কনস্ট্যান্টাইন: ম্যাচে দু-দু’বার গোলকিপারের বিরুদ্ধে ওয়ান টু ওয়ান পরিস্থিতি পাওয়া সত্ত্বেও যদি গোল করতে না পারি, তা হলে এটা ওদের ভুল, যেটা আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। বড় দলের বিরুদ্ধে ৬-৭টার বেশি সুযোগ পাওয়া যাবে না। আমাদের সেগুলোই কাজে লাগাতে হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু পাঁচটার মধ্যে চারটিতেই হারের ব্যাখ্যা দেবেন কী ভাবে?
কনস্ট্যান্টাইন: এ বারে দল থেকে শুরু করে সব কিছুই নতুন। গত মরশুমে সব মিলিয়ে একটা ম্যাচ জিতেছিল ক্লাব। এর পরে আর একটা ম্যাচ জিতলে কি সবাই খুশি হবে? গতবার একটা ম্যাচ জিতেছি বলে এ বার আর একটার বেশি ম্যাচ জেতার দরকার নেই, এটা কখনওই বলছি না আমি। হয়তো শুক্রবার, বা তার পরে। বা এমনও হতে পারে টানা ছ’টি ম্যাচে জিতলাম। এই লিগে সবরকম হতে পারে। কিন্তু সমর্থকেরা মনে করছে পাঁচটা ম্যাচেই আমরা দল তৈরি করে ফেলেছি। আসলে তা নয়। আমাদের এখনও ভিত শক্ত করতে হবে। অনেক ভাল জায়গায় যেতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। কিন্তু তার জন্য অনেক কাজ বাকি, যেটা রাতারাতি হওয়া সম্ভব নয়। সমর্থখদের এটাই বুঝতে হবে। তাঁদের শুধু দলকে সমর্থন দিলে হবে না, সময়ও দিতে হবে।
প্রশ্ন: এ রকম একটা ম্যাচে একটা জয়ই কি আপনাদের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করেন?
কনস্ট্যান্টাইন: দেখুন আমরা হেরেছি বটে, কিন্তু কেউ আমাদের কোণঠাসা করে হারাতে পারেনি। চার-পাঁচ গোলে কোনও ম্যাচেই হারিনি। সব ম্যাচেই দুই দললের মধ্যে ভাল লড়াই হয়েছে। তার মানেই আমরা ঠিক দিকে এগোচ্ছি। যদি আমরা কোনও গোলের সুযোগ তৈরি করতে না পারতাম বা গোলমুখী শট নিতে না পারতাম, তা হলে আমিই হয়তো দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে চলে যেতাম। চেন্নাইনের বিরুদ্ধে আমরা যে পারফরম্যান্স দেখিয়েছি, প্রথম ম্যাচের তুলনায়, তা খুবই খারাপ। শুক্রবারের ম্যাচের আগে আমাদের সেই জায়গাটা ঠিক করে নিতে হবে।
প্রশ্ন: গোলের সামনে গিয়ে অনেক ভুল করছেন আপনার দলের খেলোয়াড়রা। এই জায়গাটায় সংশোধন দরকার বলে মনে করেন আপনি?
কনস্ট্যান্টাইন: অবশ্যই দরকার। আমরা অনুশীলনে নিয়মিত এটা করছি। দলের অনেক ছেলেই অনুশীলন শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও নিজেরাই অনুশীলন করতে থাকে। এটা আমার কাছে একটা ইতিবাচক ব্যাপার। দু’দিন আগেও দেখেছি অনুশীলনের পরে কেউ ক্রসিং, কেউ ফিনিশিং অনুশীলন করছিল, প্রায় আট-ন’জন। আশা করি, এর ফলে অনেক উপকার পাবে ওরা।