প্রচুর ফলোয়ার্স। আর সেটাকে কাজে লাগিয়ে যেমন খুশি আয় করেন 'ইনফ্লুয়েনসার'দের একাংশ। অনেকে আবার টাকা নিয়েই যে বিজ্ঞাপন করছেন, সেটা স্পষ্টও করেন না। ভিডিয়ো-পোস্টে সরাসরি সেই প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন করেন। এবার থেকে তেমনটা করলে কড়া আইনি পদক্ষেপ হবে। এই বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে কেন্দ্র সরকার। আগামী মাসেই এই 'গাইডলাইন' প্রকাশিত হওয়ার কথা। তাতে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েনসারদের 'ব্র্যান্ড পার্টনারশিপে'র কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আবশ্যিক করা হবে।
কেমন? ধরুন কোনও বিউটি ভ্লগার তাঁর স্কিন কেয়ার রুটিন পোস্ট করলেন। তাতে দেখা যাচ্ছে তিনি 'X' কোম্পানির ময়েশ্চরাইজার ব্যবহার করছেন। সেটির ভূয়সী প্রশংসাও করলেন। ফলোয়াররা দেখে ভাবলেন তিনি হয় তো সত্যিই সেটি ব্যবহার করেন। কিন্তু আদতে যে সেটি 'পেউড রিভিউ' তা পোস্টে কোথাও উল্লেখ করলেন না ওই ভ্লগার। আরও পড়ুন: বাবার বকুনি খেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল কিশোরী youtuber, কোথায় খোঁজ মিলল তার?
আবার ধরুন কেউ গ্যাজেট রিভিউ করেন। তিনি কোনও নতুন স্মার্টফোন রিভিউ করলেন। সেটির দারুণ রেটিং দিলেন। এদিকে তিনিও কোথাও উল্লেখ করলেন না যে, আদতে ফোন নির্মাতা সংস্থাই তাঁকে মোটা টাকা দিয়েছে রিভিউ করার জন্য।
এমন উদাহরণ সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে অজস্র। এর ফলে সাধারণ ব্যবহারকারী, ভোক্তারা বিভ্রান্ত হন। অনেকে খারাপ প্রোডাক্ট কিনতেও প্ররোচিত হন। সেই সমস্যার সমাধানেই এই উদ্যোগ।
এর আগেও চলতি বছর জুনে এমন নিয়ম জারি করে কেন্দ্র। বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন নির্মূল করতে কড়া নির্দেশিকা তৈরির প্রক্রিয়া বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কেন্দ্রীয় আধিকারিক বলেন, 'এখনকার দিনে অনলাইন কনটেন্ট দেখেই নতুন প্রজন্ম নিজেদের কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নেয়। এদিকে এর একটি সমস্যা রয়েছে। টেলিভিশনে কোনও মডেল-অভিনেতা বিজ্ঞাপন করলে তা সহজেই বোঝা যায়। কিন্তু কোনও কোনও ইনফ্লুয়েন্সারের ভিডিয়ো-ছবি দেখে সেটি যে আসলে বিজ্ঞাপন, তা ধরাই যায় না। তাছাড়া অভিনেতাদের মতো ইনফ্লুয়েনসাররা প্রত্যেকের পরিচিত না-ও হতে পারেন। ফলে তাঁদের স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, তাঁরা বিজ্ঞাপন করছেন।'
এর পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া, বা SEBI, লাইসেন্সহীন তথাকথিত ফিন্যান্সিয়াল ইনফ্লুয়েন্সারদের নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনছে। অনুমোদনহীন এমন পরামর্শদাতাদের সীমাবদ্ধতার বিষয়ে নিজস্ব নির্দেশিকা তৈরি করা হচ্ছে। অসাধু বা অপ্রশিক্ষিত ইনফ্লুয়েনসারের কথায় যাতে কেউ আর্থিক লোকসানের শিকার না হন, সেই উদ্দেশ্যেই এই নির্দেশিকা।
গত ৭ সেপ্টেম্বর, মিন্টের রিপোর্ট অনুযায়ী, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েনসারদের জন্য তৈরি নয়া নির্দেশিকা অনুসারে 'ব্র্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন' স্পষ্ট না করলে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। বারবার এই একই কাজ করলে সেক্ষেত্রে ৫০ লক্ষ টাকায় পৌঁছতে পারে জরিমানার পরিমাণ।
সম্প্রতি প্রকাশিত অ্যাডভারটাইজিং স্ট্যান্ডার্ডস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার (ASCI) রিপোর্ট অনুযায়ী, ইনফ্লুয়েনসারদের করা এমন বিজ্ঞাপনগুলির মধ্যে প্রায় ৮৭% ক্ষেত্রেই সমস্ত নির্দেশিকা লঙ্ঘন করতে দেখা গিয়েছে। এর মধ্যে লক্ষ লক্ষ ফলোয়ার থাকা খুব নামী ইনফ্লুয়েনসাররাও রয়েছেন। তাঁদের অনেকেই ওয়েলনেস, ফ্যাশন এবং ইলেকট্রনিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে তাঁদের 'পার্টনারশিপ ডিলে'র বিষয়টি স্পষ্ট করে উল্লেখ করেননি। আরও পড়ুন: 'ইনস্টাগ্রাম ইনফ্লুয়েন্সারদের জন্য নিয়ম তৈরি হোক',সরকারকে নির্দেশ HC-র
বিশ্লেষকদের অনুমান, ভারতে ইনফ্লুয়েনসার মার্কেটিংয়ের বাজার প্রায় ৯০০ কোটি টাকার। ২০২৫ সালের মধ্যে তা ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। দেশের বহু নতুন স্টার্টআপ সংস্থা শুধুমাত্র ইনফ্লুয়েনসার মার্কেটিংয়ের ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছে। এর সঙ্গে বহু ক্রেতার টাকা জড়িয়ে। ফলে এই বিষয়ে সরকারি নিয়মাবলী খুবই প্রাসঙ্গিক বলা যেতে পারে।