মহাশিবরাত্রি উৎসব এই বছর ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে। শাস্ত্র মতে এই দিনে ভগবান শিব ও দেবী পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল। অন্য একটি বিশ্বাস অনুসারে, এই দিনে ভগবান শিব জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, মহাশিবরাত্রিতে উপবাস, পুজো ও জলাভিষেক করলে জীবন সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যা দূর হয় এবং পরিবারে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে। কিন্তু ভগবান শিবের পুজোয় কখনই শঙ্খের ব্যবহার করা হয় না, তা ছাড়া ভোলেনাথকে কেতকী ফুল অর্পণ করাও নিষেধ।
শিবপুরাণ অনুসারে শঙ্খচূড় নামে এক পরাক্রমশালী রাক্ষস ছিল। শঙ্খচূড় ছিলেন দৈত্যরাম দম্ভের পুত্র। দীর্ঘকাল দৈত্যরাজ দম্ভের ঘরে কোনো সন্তানের জন্ম না হলে তিনি ভগবান বিষ্ণুর জন্য কঠোর তপস্যা করেন। তপস্যায় খুশি হয়ে বিষ্ণু আবির্ভূত হলেন। শ্রী বিষ্ণু বর চাইতে বললেন, তখন দম্ভ এক পরাক্রমশালী পুত্রের বর চাইলেন যিনি তিন জগতের জন্য অজেয় হবেন। তথাস্তু বললেন শ্রী হরি। তারপর দম্ভের একটি পুত্রের জন্ম হয়, যার নাম ছিল শঙ্খচূড় । শঙ্খচূড় পুষ্করে শ্রী ব্রহ্মার জন্য কঠোর তপস্যা করেছিলেন এবং তাঁকে খুশি করেছিলেন। ব্রহ্মা বর চাইতে বললেন, তখন শঙ্খচূড় এমন বর চাইলেন যে তিনি দেবতাদের কাছে অজেয় হয়ে উঠবেন। ব্রহ্মা তাকে আশীর্বাদ করলেন এবং তাঁকে শ্রীকৃষ্ণের বর্ম দিলেন। একই সময়ে ব্রহ্মা শঙ্খচূড়কে ধর্মধ্বজের কন্যা তুলসীকে বিয়ে করার নির্দেশ দেন।
ব্রহ্মার আদেশে তুলসী ও শঙ্খচূড় এর বিয়ে হয়। ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর বর পেয়ে রাক্ষস শঙ্খচূড় তিন জগতে মালিকানা প্রতিষ্ঠা করে। তখন ব্যথিত শঙ্কিত হয়ে দেবতারা বিষ্ণুর কাছে সাহায্য চাইলেন, কিন্তু তিনি নিজেই দম্ভকে এমন একটি পুত্র দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন, তাই তিনি শিবের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন । তখন ভগবান শিব দেবতাদের দুঃখ দূর করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু শ্রী কৃষ্ণ কবচ ও তুলসীর পতিব্রত ধর্মের কারণে ভগবান শিবও তাকে বধে সফল হতে পারেননি, তখন বিষ্ণু ব্রাহ্মণের রূপ ধারণ করেন এবং অসুর রাজার কাছ থেকে দান হিসেবে তাঁর শ্রীকৃষ্ণ কবচ গ্রহণ করেন। এরপর শঙ্খচূড় এর রূপ ধারণ করে তুলসীকে ছলনা করেন। সেই সুযোগে শিব তাঁর ত্রিশূল দিয়ে শঙ্খচূড়কে বধ করেন এবং তার হাড় থেকে শঙ্খের জন্ম হয়। যেহেতু শঙ্খচূড় ছিলেন বিষ্ণুর ভক্ত, তাই লক্ষ্মী-বিষ্ণুর কাছে শঙ্খের জল অত্যন্ত প্রিয় এবং সমস্ত দেবতাকে শঙ্খর জল নিবেদনের বিধান রয়েছে। কিন্তু যেহেতু শিব তাকে হত্যা করেছিলেন। তাই শঙ্খের জল শিবের জন্য নিষিদ্ধ বলা হয়। এই কারণে, শিবকে শঙ্খ দিয়ে জল নিবেদন করা হয় না।
শিবপুরাণ অনুসারে, ভগবান শিব স্বয়ং তাঁর পুজো থেকে কেতকী ফুলকে ত্যাগ করেছেন। এর পেছনে একটি কারণ রয়েছে। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, একবার শ্রী ব্রহ্মা এবং ভগবান বিষ্ণুর মধ্যে বিবাদ হয়েছিল যে দুজনের মধ্যে কে বেশি শক্তিশালী। বিবাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল শিবকে। ভগবান শিবের মায়া থেকে একটি জ্যোতির্লিঙ্গের উদ্ভব হয়েছিল। শিব বলেছিলেন যে ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর মধ্যে যে এই জ্যোতির্লিঙ্গের শুরু বা শেষ বলবেন, তাকে বড় বলা হবে। ব্রহ্মা জ্যোতির্লিঙ্গে নেমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং এর শুরুর সন্ধান করতে থাকেন এবং বিষ্ণু শেষের সন্ধানে উঠে যান। অনেকদিন পর ব্রহ্মাজী দেখলেন তার সঙ্গে একটি কেতকী ফুলও এসেছে।
ব্রহ্মা মিথ্যা বলার জন্য কেতকী ফুল কে নিয়ে ভগবান শিবের কাছে পৌঁছেন। এর পর ব্রহ্মা দাবি করেন যে তিনি জানতে পেরেছেন জ্যোতির্লিঙ্গের উৎপত্তি কোথা থেকে। অন্যদিকে বিষ্ণু বলেছিলেন যে তিনি জ্যোতির্লিঙ্গের শেষ জানতে পারেন নি। নিজের কথা সত্য প্রমাণ করতে ব্রহ্মা কেতকী ফুল কে পেয়েছিলেন মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য, কিন্তু শিব সব সত্য জানতেন। মিথ্যা বলার জন্য ব্রহ্মার একটি মাথা কেটে ফেলার সময় তিনি কেতকী ফুলকে তাঁর পুজো থেকে বাদ দিতে বলেছিলেন।