বিজ্ঞানী অরবিন্দ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী নীতা মুখোপাধ্যায়। তাঁরা প্রবাসী বাঙালি। তবে শান্তিনিকেতনের সঙ্গে তাঁদের নাড়ির টান। তিনি বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী। জীবনের শেষবেলায় সেই বিশ্বভারতীর কাছেই তাঁদের সম্পত্তির কাগজপত্র তুলে দিলেন। তাঁরা উপাচার্যের হাতে কাগজপত্র তুলে দেন।
আসলে মুর্শিদাবাদের একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে ছোটবেলাটা কেটেছে অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের। সেখান থেকে শান্তিনিকেতনে পাঠভবনে পড়তে এসেছিলেন তিনি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। এরপর তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য ইংল্যান্ড চলে যান। বিজ্ঞানের গবেষণায় তাঁর বহু অবদান। কর্মসূত্রে থাকতেন লন্ডনে। ১৯৯৭ সালে শান্তিনিকেতনে একটি বিরাট অট্টালিকা বানিয়েছিলেন তিনি। সেখানে এলাহি ব্যবস্থা। অপূর্ব সুন্দর এই অট্টালিকা। সেই সমস্ত সম্পত্তি তিনি তুলে দিলেন বিশ্বভারতীর হাতে।
বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, আমি এই বিশ্বভারতীর পাঠভবনে পড়তে এসেছিলাম। বাবা-মা আমায় খুব কষ্ট করে এখানে পাঠিয়েছিলেন। তাঁরা পড়াশোনা করতে পারেননি। কিন্তু তাঁদের ইচ্ছা ছিল যাতে আমি কিছু পড়াশোনা করতে পারি। সব কিছু শিখেছি এখান থেকে। এখানে ছোটবেলায় যে অঙ্ক আর ইংরেজি শিখেছিলাম সেটা সারাজীবন কাজে লেগেছে। প্রাথমিকভাবে যে অঙ্ক আর ইংরেজি শিখেছিলাম সেটাই বিদেশে কাজে লাগালাম। সরাসরি পিএইচডি করেছি। আমার ছেলে মেয়েরা অক্সফোর্ড থেকে পড়াশোনা করছে। যা কিছু হয়েছে সবটা বিশ্বভারতীর জন্য। আমার ৮০ বছর বয়স। এই বাড়িটা সব কিছু দিয়ে করেছি। শান্তিনিকেতনকে খুব ভালোবাসি। আমার চোখে খারাপ কিছুই পড়ে না। সাইকেল চেপে ঘুরে বেড়াই। তবে এবার বুঝতে পারছি, এবার সময় এসেছে। তবে আশ্রমের চেহারা কিছুটা বদলেছে বলে বুঝতে পেরেছি। তবে এবার কিছুটা শৃঙ্খলা আসছে। শান্তিনিকেতনের চরণে দিয়ে চলে যাব ভেবেছিলাম। এবার সময় এসেছে। সব দিয়ে গেলাম। আর সময় নেই।
উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, একজন বিশ্বখ্য়াত মানুষ সাড়ে ৬ কাঠা জমির জন্য বিশ্বকে উত্তাল করে দিচ্ছেন। আর একজন বিজ্ঞানী অরবিন্দ বাবু এত জমি ও বাড়ি দিয়ে দিচ্ছেন। একজন সংকীর্ণ মানসিকতার আর অপরজন বড় মানসিকতার।
কার্যত এই অনুষ্ঠানেও অমর্ত্য সেনের নাম না করেও খোঁচা দিলেন উপাচার্য।