শিক্ষক–শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, অধ্যাপক থেকে রাবীন্দ্রিক অনুরাগী—সবাই ক্ষুব্ধ বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে। এবার বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে সরব হলেন বিজেপি কেন্দ্রীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা। এতদিন বিজেপি বিরোধীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছিল। এবার খোদ বিজেপি নেতা সরব হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। এখানেই থেমে থাকেননি অনুপম হাজরা। বিশ্বভারতীর ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে প্রয়োজনে উপচার্যকে গ্রেফতার করা উচিত বলেও মনে করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক। আর তা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন তিনি।
এই ফেসবুক পোস্টের পর বিশ্বভারতী জুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। কারণ কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতার সঙ্গে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সংঘাত এখন প্রকাশ্যে চলে এল। অনুপম হাজরা ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমি নিজে একজন তফশিলি সম্প্রদায় ভুক্ত। বিশ্বভারতী থেকে আমার পড়াশোনা। অধ্যাপনাও করেছি বেশ কয়েক বছর। তাই বিশ্বভারতীর বিষয়ে কোনও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকলে চুপ করে থাকতে পারি না।’ এবার উপাচার্যের বিরুদ্ধে তিনি যা পোষ্ট করেছেন তার অর্থ এটাই—উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আচরণে বিশ্বভারতী কালিমালিপ্ত হচ্ছে। তাই বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তি বাঁচাতে মরিয়া তিনি। সেক্ষেত্রে তপসিলি জাতির অফিসারকে হেনস্তার বিষয়টি প্রমাণ হলে উপাচার্যকে গ্রেফতার করা উচিত।
এদিকে কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি আটকাতে ষড়যন্ত্র ও তফশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় অপমানজনক মন্তব্যের জেরে বিশ্বভারতীর উপাচার্য–সহ চারজন আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। শান্তিনিকেতন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বিশ্বভারতীর ডেপুটি রেজিস্টার প্রশান্ত মেশরাম। এই নিয়ে অনুপম লেখেন, ‘একজন আধিকারিক তিনি তফশিলি জাতির। তাই তাঁকে জাতি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন উপাচার্য। শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। আমি চাই সঠিক তদন্ত হয়ে, যদি উপাচার্য দোষী প্রমাণিত হয়, পুলিশ তাঁকে জেলে পাঠাক। আগে উপাচার্য পৌষমেলা, বসন্ত উৎসব বন্ধ করেছেন। তাঁর অহংকারের জন্য বারবার সমালোচিত হতে হচ্ছে বিশ্বভারতীর আচার্য নরেন্দ্র মোদীকে। যে পরিবেশ তৈরি হচ্ছে তার জন্য দায়ী সম্পূর্ণ উপাচার্য।’
আরও পড়ুন: দক্ষিণ দিনাজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করলেন রাজ্যপাল, বড় পদক্ষেপ
ঠিক কী বলছে তৃণমূল কংগ্রেস? এই ঘটনার কথা জানতে পেরে রে রে করে নেমে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেসও। এই বিষয়ে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘এটা ঠিক যে, উপাচার্যের জন্যই বিশ্বভারতীর মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের মান তলানিতে ঠেকেছে। এটা আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী–সহ অনুপমের দলের সব নেতারাই জানেন। তাহলে কি কেন্দ্রীয় সরকার জেগে ঘুমোচ্ছে? এই দায় এড়াতে পারেন না প্রধানমন্ত্রী। কারণ বিশ্বভারতী আজ কালিমালিপ্ত।’ আর প্রশান্ত মেশরামের অভিযোগ, ‘কর্তৃপক্ষের তরফে তাঁকে কিছুতেই লিয়েন দেওয়া হচ্ছিল না। পুরনো কিছু মিথ্যা অভিযোগ তুলে হেনস্থা করা হচ্ছিল। আর আমি যেহেতু তফশিলি জাতি সম্প্রদায়ভুক্ত। তাই আমাকে একটি বৈঠকে উপাচার্য জাত নিয়ে কটু কথা বলেন।’ এখন তিনি লিয়েন নিয়ে ওড়িশার কোরাপুট কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষক পদে নিযুক্ত আছেন। প্রশান্তবাবুর অভিযোগ নিয়ে মামলা চলছে সিউড়ি জেলা জজ কোর্টে। নেটাগরিকদের কাছে অনুপমের অনুরোধ,‘উপাচার্যের কাজের জন্য দয়া করে বিজেপিকে বা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করবেন না।’