বিধানসভা ভোটে ভালো কাজের ‘পুরস্কার’ পেলেন। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুরস্কার’ (তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক) পাওয়ার কাজটা কি আরও প্রশস্ত করে দিয়ে গিয়েছিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ? এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
তাঁদের মতে, ২০১৪ সালে অভিষেক যুব তৃণমূলের সভাপতির পদ বসলেও রাজ্য স্তরেই মূলত পরিচিত সীমাবদ্ধ ছিল। সেই অর্থে কোনও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়নি। কিন্তু ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর সেই ‘নেগেটিভ’ পয়েন্ট দূর করে দেন খোদ মোদী-শাহ? এমন কোনও সভা কার্যত ছিল না যেখানে মোদী, শাহ বা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার মুখ থেকে ‘ভাইপো’ শোনা যেত না। মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে যত না বেশি আক্রমণ করা হত, তার থেকে বেশি বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের নিশানায় ছিলেন অভিষেক। গরু পাচার, বালি পাচার, আমফানের ত্রাণ দুর্নীতি - সবেতেই তৎকালীন যুব তৃণমূলের সভাপতিকে নিশানা করে যেতেন মোদী-শাহরা। তার ফলে লড়াইটা মমতা বনাম মোদী হলেও সামিল হয়ে গিয়েছিলন অভিষেক। জাতীয় স্তরে যথেষ্ট আলো পড়েছিল অভিষেকের উপর। আর সেই অভিষেক ‘কাঁটায়’ বিদ্ধ করার স্বপ্নে বিভোর ছিল বিজেপি।
কিন্তু গত ২ মে সেই স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। ২১৩ টি আসনে জিতে হ্যাটট্রিক করে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই অভাবনীয় জয়ের কৃতিত্ব যেমন মমতাকে দেওয়া হয়, তেমনই যথেষ্ট বাহবা পান অভিষেক। যে ‘ভাইপোকে’ দুর্নীতির ছায়ায় জাতীয় স্তরে তুলে ধরেছিল বিজেপি, সেই অভিষেকই হয়ে ওঠেন তৃণমূলের জয়ের অন্যতম কারিগর। মমতার মতো তিনিও যে উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম - রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে ঘুরেছেন, বিজেপির চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে তৃণমূলের ঘুঁটি সাজিয়েছেন, তা সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে জাতীয় স্তরেও উঠে আসে। যা আখেরে অভিষেকের ‘প্লাস পয়েন্ট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অভিষেক তো যুব সম্প্রদায়ের মুখ বটেই। তাই তাঁকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে বসিয়ে যুবসমাজের কাছে পৌঁছানো যাবে। অভিষেক যথেষ্ট বাগ্মীও। সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে তাঁর বাগ্মিতাকেও ব্যবহার করা হবে। সঙ্গে বার্তা দেওয়া যাবে, যে অভিষেককে লাগাতার আক্রমণ করে যাওয়া হয়েছে, তাঁর কাছেই পরাস্ত হয়েছেন মোদী-শাহ। অর্থাৎ অভিষেকের জাতীয় স্তরে পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে মোদী-শাহের অবদানও যে নেহাত কম নয়, সেই টিপ্পনিও করেছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।