করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনা এবং বিপুল মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা এখনও মানুষ ভোলেনি। তাই সদা সতর্ক থাকেন ইঞ্জিনিয়াররা। সেই সতর্কতা থেকেই ট্র্যাকে ট্রেন আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে এগোচ্ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। হঠাৎ তিনি খেয়াল করলেন বৈদ্যুতিন সিগন্যাল দিচ্ছে ট্র্যাকে ট্রেন আছে। অথচ লাইনের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে দেখা যাচ্ছে শুনশান ট্র্যাক। তাহলে এমন সিগন্যাল কেন? আসলে ট্র্যাকে ট্রেন চলাচলের হিসেব রাখা যন্ত্রটিই ভুল তথ্য পাঠাচ্ছে রিলে কেবিনে। এভাবেই যান্ত্রিক ত্রুটি ধরে ফেললেন পূর্ব রেলের প্রিন্সিপাল চিফ সিগন্যালিং ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর তৎপরতায় বহু ট্রেন দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে বলে মনে করছে পূর্ব রেলের কর্তারা।
কোন যন্ত্রে ধরা পড়ল ত্রুটি? রেলের এই যন্ত্রের নাম মাল্টি–সেকশন অ্যাক্সেল কাউন্টার বা এমএসডিএসি। রেলের যে কোনও জোনের সেকশনের নির্দিষ্ট অংশে ট্রেন চলাচলের হিসাব রাখা এবং রিলে কেবিনে তথ্য পাঠানোই এই সেন্সর যন্ত্রের কাজ। ওড়িশায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার পর গোটা দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হচ্ছে। আর তাই ভারতীয় রেলের রিসার্চ ডিজাইন অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অর্গানাইজেশনের অনুমোদিত নকশায় তৈরি চার হাজার এমন মাল্টি–সেকশন অ্যাক্সেল কাউন্টার দেশের নানা রেলওয়ে জোনে বসানোর সিদ্ধান্ত হয়। এবার সেই যন্ত্রে ত্রুটি দেখা দিল।
কত দাম এই যন্ত্রের? এই যন্ত্র ঠিক চললে ট্রেনের পরিষেবা নিয়ে ভাবতে হয় না। মানুষ এবং রেলের অফিসাররা নিশ্চিন্তে থাকেন। এই একটি যন্ত্রের দাম পাঁচ লক্ষ টাকা। সেটাই চারদিকে বসানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিতেই পারে। সেটা মনিটরিং করলেই সব ঠিক থাকবে। ইতিমধ্যেই তিন হাজার যন্ত্র বসানো হয়েছে পূর্ব রেল, দক্ষিণ-পূর্ব রেলে এবং নানা জোনে। শুধু মনিটরিং দরকার। না হলে আবার ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে পূর্ব রেলের সিগন্যাল ব্যবস্থা পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ধরে ফেললেন এই যন্ত্রেই রয়ে গিয়েছে মারাত্মক প্রযুক্তিগত খামতি।
আরও পড়ুন: কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও র্যাগিংয়ের অভিযোগ, ছাত্রের ঘরে প্রস্রাব করে মদ্যপানে চাপ
আর কী জানা যাচ্ছে? পূর্ব রেল সূত্রে খবর, ওই যন্ত্রের কাজ একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে ট্র্যাকের উপরে কতগুলি চাকা রয়েছে সেটার হিসাব রাখা। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই স্টেশন ম্যানেজার জানতে পারেন সেকশনে ট্রেন আছে কিনা। কিন্তু ওই যন্ত্র ভুল হিসাব পাঠাচ্ছে। এটা ট্র্যাক পরীক্ষক ট্র্যাকের উপর দিয়ে রেঞ্চ টেনে এগোলে লাইনে ট্রেন থাকার সিগন্যাল দিচ্ছিল ওই যন্ত্র। আর তাতেই বোঝা গেল ওই যন্ত্র ত্রুটিপূর্ণ। তৎক্ষণাৎ ওই ত্রুটি ধরে সেটা আরডিএসও’র সদর দফতরে জানানো হয়। তাই ওই তিন হাজার যন্ত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।