কঠিন আইন-কানুনের কচকচানি নয়, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের কর্মজীবনের শেষদিনের এজলাসের প্রতিটি কোণায় থাকল আবেগ। বিচারপতির চেয়ারে আর কোনওদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বসবেন না ভেবেই আবেগে ভেসে গিয়েছেন একাধিক মামলাকারী। কারও কারও চোখে জলও ছিল। একজন তো আকুতির সুরে বলেন, ‘আপনি চলে গেলে কী হবে আমাদের?’ যদিও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান যে তাঁর যাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। তাঁর জায়গায় অন্য কোনও বিচারপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। যিনি মামলাকারীদের সুরাহা দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
তাতেও অবশ্য মন খারাপের রেশ থেকে গিয়েছে এজলাসে। যে মন খারাপটা রবিবার থেকেই শুরু হয়েছে। কারণ রবিবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দেন যে সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে তাঁর শেষদিন হতে চলেছে। মঙ্গলবার তিনি ইস্তফা দেবেন। তারপর 'বৃহত্তর ক্ষেত্রে' যাবেন বলে ঘোষণা করে দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। আর সেটা যে রাজনীতির ময়দান হতে চলেছে, তাও বুঝিয়ে দেন।
আর সেই ঘোষণার পর থেকে বিচারপতি হিসেবে নিজের কর্মজীবনের শেষদিনে তিনি কী করেন, সেদিকে নজর ছিল সকলের। আর সোমবার তিনি এজলাসে আসার পরই এক আইনজীবী বলে ওঠেন, ‘ছেড়ে যাবেন না আমাদের। এটা আমাদের কাছে কালো দিন।’ যদিও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান যে এখন তাঁর অন্য কাজ করার সময় এসে গিয়েছে। বিচারপতি হিসেবে তাঁর কাজের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে বলে জানান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
সেইসঙ্গে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, তাঁর হাতে যা যা মামলা ছিল, সেগুলির সব ছেড়ে দিচ্ছেন। আংশিকভাবে যে মামলাগুলি (পার্ট-হার্ড ম্যাটার) শুনেছিলেন, সেগুলিও ছেড়ে দিচ্ছেন বলে জানান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। যিনি সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা আদালতের বিচারককে বরখাস্ত করার জন্য হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।
তারইমধ্যে সোমবার বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এক মহিলা উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান যে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কারণেই তিনি 'সুবিচার' পেয়েছেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্য তাঁর সন্তানের চিকিৎসা হয়েছিল। পান খোরপোষের টাকা। আর সেজন্য বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে প্রণাম করতে চান বলে জানান ওই মহিলা। যদিও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানান যে কেউ তাঁর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করুন, সেটা চান না। তিনি কারও পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম গ্রহণ করেন না বলে জানান বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: ‘যেখানে দাঁড়াবেন, সেখানে হারাব’, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন কল্যাণ