যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় এখন তোলপাড় রাজ্য–রাজনীতি। কারণ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে মুখ খুলেছেন। তার মধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ওই হস্টেলেই গত বুধবার উপর থেকে পড়ে ছাত্রের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। এদিন পুনর্নির্মাণের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ শহরতলি) বিদিশা কলিতা দাশগুপ্ত। বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ৬ জনকে আরও তলব করেছে যাদবপুর থানা।
এদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মৃত্যুর জেরে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং রুখতে তৎপর হল রাজ্য সরকার। এই ঘটনার পর এদিন একাধিক নির্দেশিকা জারি করল শিক্ষা দফতর। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস গঠন করেছেন অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি। তা নিয়ে তৎপর শিক্ষা দফতরও। জেলাভিত্তিক অ্যান্টি র্যাগিং কমিটিও গঠন করা হয়েছে। উচ্চশিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে পুলিশ কমিশনারকে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ১৩ দফা পরামর্শ দিয়েছে শিক্ষা দফতর। আবার দীর্ঘদিন সিসিটিভি বসানোর প্রস্তাব মানা না হলেও যাদবপুরকে এবার সিসিটিভি ক্যামেরায় মুড়ে দেওয়ার পক্ষে মত অনেকের বলে স্বীকার করেছেন রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। প্রস্তাবগুলি এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের বৈঠকে পাশ করিয়ে অর্থ সংস্থানের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাবেন বলেছেন তিনি।
অন্যদিকে শিক্ষা দফতরের পক্ষ থেকে নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, হস্টেলে থাকতে হলে হলফনামা দিতে হবে। খুব মজবুত করতে হবে অ্যান্টি র্যাগিং স্কোয়াডকে। নতুন পড়ুয়া এলে তাদের ছোট গ্রুপে ভেঙে দিতে হবে। আর কোনও অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। রাজ্য এবং জেলাস্তরে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে গঠন করতে হবে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি ও মনিটরিং সেল। এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষ নিষ্ক্রিয় থাকলে অভিযোগ খতিয়ে দেখবে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি। তাছাড়া ভর্তির সময়ে ছাত্রকে র্যাগিং না করার হলফনামা দিতে হবে। র্যাগিং বিরোধী প্রচার চালাতে হবে। ইতিমধ্যেই ডিন অব স্টুডেন্টসের নামে নির্দেশিকা জারি হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রাক্তন ছাত্রদের হস্টেল ছেড়ে দিতে হবে। আগামী বৃহস্পতিবার হস্টেল ভিজিট করতে পারেন রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু।
আরও পড়ুন: দেদার বাড়ল আলুর দাম, বেদম ছ্যাঁকায় জ্বলছে হেঁসেল, নাভিশ্বাস মধ্যবিত্তের
আর কী জানা যাচ্ছে? ছাত্রের পারলৌকিক কাজ করেন তাঁর বাবা। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের সময় জ্ঞান হারান ছাত্রের মা। শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের সময় ছেলের ছবি ছুঁয়ে দোষীদের শাস্তির প্রতিজ্ঞা করেন ছাত্রের বাবা। তিনি বলেন, ‘শাস্ত্রীয় মতে ছেলের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হল। তবে যে দিন ছেলের মৃত্যুতে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারব, সেদিনই হবে আসল শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। ছেলের ছবি ছুঁয়ে শপথ নিলাম।’ আর রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু বলেন, ‘আমরা পুলিশকে আবেদন করেছিলাম, তারা আসার আগে যেন কর্তৃপক্ষকে জানায়। তবে পুলিশ সরাসরি তা খারিজ করে দিয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনও আলোচনা তারা করতে চায়নি।’