কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে 'কালীঘাটের কাকু'কে গতকাল ডোকার ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, গতকাল গভীর রাত ১২টা ৫২ মিনিটে শুরু হয়েছিল সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের কাজ। এর আগে অবশ্য তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়। এরপর ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সামনে সুজয়কৃষ্ণর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়। তিনটি বাক্য তাঁকে দিয়ে বারবার বলানো হয় বলে জানা গিয়েছে। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, যে তিন বাক্য বারবার সুজয়কৃষ্ণকে দিয়ে বলানো হয়েছে, সেগুলি হল - 'আপনার নাম কী?', 'আপনার স্ত্রীর নাম কী?' এবং 'আমার সাহেবকে কেউ ছুঁতে পারবে না'। (আরও পড়ুন: 'রাশিয়া যদি বেশি...', অশোধিত তেল আমদানি নিয়ে জল্পনার মাঝে কোন ইঙ্গিত কেন্দ্রের?)
আরও পড়ুন: আজই কেজরিওয়ালকে গ্রেফতার করবে ইডি? একের পর বিস্ফোরক দাবি AAP নেতাদের
এদিকে প্রথমে নাতি সুজয়কৃষ্ণ মুখ খুলতে চাননি। পরে অবশ্য চিকিৎসকদের নির্দেশে ১২টা ৫২ মিনিটে মুখ খোলেন তিনি। কণ্ঠস্বরের নমুনা দেওয়ার পর জোকা ইএসআই হাসপাতালের কেবিনে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেন তিনি। পরে রাত ৩টে ২০ মিনিট নাগাদ আবার ইএসআই হাসপাতাল থেকে এসএসকেএম হাসপাতালে ফেরত আনা হয় সুজয়কৃষ্ণকে। উল্লেখ্য, নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে একটি ভয়েস রেকর্ড হাতে আসে ইডির। সেই কণ্ঠস্বরটি সুজয়কৃষ্ণর বলেই দাবি করে ইডি। তবে সেই বিষয়ে নিঃসন্দেহ হতেই 'কালীঘাটের কাকু'র কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু আদালতের দ্বারস্থ হয়েও সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করে উঠতে পারছিল না ইডি। তবে 'অসুস্থ' সুজয়কৃষ্ণের কণ্ঠস্বরের নমুনা অবশেষে ইডির হাতে চলে এসেছে।
উল্লেখ্য, বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে শুনানির পর সুজয়কৃষ্ণকে হেফাজতে নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে ইডি। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্স ও কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে পৌঁছে যান ইডির আধিকারিকরা। প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে সম্পূর্ণ করা হয় যাবতীয় প্রক্রিয়া। রাত ৯টা ১৩ মিনিট নাগাদ হুইল চেয়ারে বসিয়ে সুজয়কৃষ্ণকে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলে ইডি। তখন সুজয়কৃষ্ণের পরনে ছিল পায়জামা, চাদর ও মুখে মাস্ক। সুজয়কৃষ্ণ উঠতেই ছুটতে শুরু করে অ্যাম্বুল্যান্স। জোকা ইএসআই হাসপাতালের রাস্তা ধরে অ্যাম্বুল্যান্স। প্রায় ৪০ মিনিটের সফরের পর রাত ৯টা ৫৫ মিনিটে জোকা ইএসআই হাসপাতালে পৌঁছয় অ্যাম্বুল্যান্স। অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামিয়ে সরাসরি জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় সুজয়কৃষ্ণকে।
প্রসঙ্গত, প্রথম যেদিন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বাড়িতে ইডি তল্লাশি চালিয়েছিল, সেদিনই তদন্তকারী সংস্থার অপর একটি টিম হানা দিয়েছিল রাহুল বেরা নামক একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের বাড়িতে। বিষ্ণুপুর থানায় কাজ করেনএই রাহুল। সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে দাবি করা হয়। সেদিনের অভিযানে রাহুল বেরার ফোন বাজেয়াপ্ত করেছিল ইডি। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের দাবি, রাহুল বেরার ফোন থেকে একটি টেলিফোনিক কথোপকথনের রেকর্ডিং ফাইল ইডির হাতে এসেছিল। সেই অডিয়ো ক্লিপের একটি স্বর সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রের বলে দাবি ইডির। ইডির দাবি, সেই অডিয়ো ক্লিপিংয়ে শোনা যাচ্ছে, রাহুলকে বলা হচ্ছে, 'মোবাইলে থাকা নিয়োগ সংক্রান্ত তথ্য মুছে ফেলো।' সেই নির্দেশ যে সুজয়কৃষ্ণই দিয়েছেন, তা আদালতে প্রমাণ করতেই কণ্ঠস্বরের নমুনা নিতে চাইছিল ইডি। আর গতরাতে অবশেষে সেই কাজে তারা সফল হয়।