‘মা কি কারও একার, মা তো সবার’। ফিল্মি এই সংলাপ আজ প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল। কারণ এমনই এক মা আজ সব থাকতেও রাস্তায়। পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন চার সন্তানকে। অথচ সেই মা আজ ইতিউতি করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাস্তায় রাস্তায়। উদ্দেশ্যবিহীন অবস্থায়। কারণ ছেলে–মেয়ে ভরা সংসার থাকলেও তারা কেউ মাকে দেখে না। সবার কাছেই আজ তিনি বোঝা। তাই এ ঠেলছে ওর কাছে। ও ঠেলছে তার কাছে। কেষ্টপুরের অটোস্ট্যান্ডে এই কথাই শোনা গেল সত্তোর্ধ্ব এক বৃদ্ধা মায়ের কাছে।
তাঁর থেকেই জানা গেল, কেষ্টপুর তালবাগানের বাসিন্দা তিনি। বয়স ৭৫ বছর। তাঁর তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। কেষ্টপুরে ছেলে–বউ থাকে। কিন্তু তাঁরা মাকে সঙ্গে রাখতে চান না। বৃদ্ধার কথায়, ‘গত ৬ মাস বাদকুল্লায় বড় মেয়ের বাড়িতে ছিলাম। ছেলে কোনও খোঁজ রাখেনি। হাসপাতালে ছিলাম, তবু খবর নেয়নি। ভাবছিলাম অনেকদিন ছেলেকে দেখি না, তাই এসেছি। আমাকে দেখেই বলল ‘কেন এলে?’। মেজো মেয়ের বাড়িতে গেলাম। ও বলছে ‘এই দায়িত্ব আমি নেব না’। মেয়ে আবার কেষ্টপুরে রেখে দিয়ে গেল।’
এই পরিস্থিতিতে একটা আস্তানার খোঁজে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন বৃদ্ধা। তিনি বলেন, ‘আজ আমি সবার কাছে বোঝা। তবে এদেরকেই পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করেছি। স্বামী নেই। তাই আজ সবাই আমায় ঠেলাঠেলি করছে। আমি কিন্তু ওদের ভাল ছাড়া খারাপ করিনি। নিজে না খেয়েও ওদের খাইয়েছি। আজ সব যেন কেমন পাল্টে গেল।’
কেষ্টপুরের এক অটোচালক জানান, তিনি তাঁর অটোতে বসিয়ে রেখেছেন। অটোচালক সন্তু মণ্ডল বলেন, ‘মাসিমা অটোয় বসে কাঁদছিল। পাশে একজন মেয়ে বসে। জিজ্ঞাসা করলাম, কী হয়েছে? উনি বললেন ‘ছেলে বের করে দিয়েছে’। ওনার মেয়েকে বললাম মাকে নিয়ে যান। উনি এদিক–ওদিক দেখে মাকে ফেলেই চলে গেলেন।’ তবে পুলিশ এসে ওই বৃদ্ধাকে বাড়িতে পৌঁছে দেন।