কাউন্টডাউন শেষ। উৎসবের শেষ আনন্দটুকু নিংড়ে নিতে চান আমজনতা। কোভিডের দাপট কমে গিয়েছে। এবার শুধুই পুজো দেখার পালা। পুজোর অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পালা। আর তারই অনুষঙ্গ হিসাবে সপ্তমীতে শুরু হয়ে গেল ঘাটে ঘাটে কলাবউ স্নান। কলকাতার বাগবাজার ঘাট থেকে জলপাইগুড়ির করলা নদীর ঘাট। একেবারে উপচে ওঠা ভিড়। গঙ্গার ঘাটে সেলফি তোলার জন্য়ও ভিড় শুরু হয়ে গিয়েছে। শাড়ি, পাঞ্জাবিতে আরও রঙিন হয়ে উঠছে চারদিক। সঙ্গে ঢাকের বাদ্যি। পুরোদস্তুর উৎসব মুখর বাংলা।
সপ্তমীর ভোর থেকে ঘাটে ঘাটে শুরু হয়ে যায় কলাবউ স্নান। আসলে নবপত্রিকা স্নানের মাধ্যমে পুজোর মূল পর্ব শুরু হয়ে গেল বাংলা জুড়ে। কলাগাছে হলুদ মাখানো হয়। এরপর সেই গাছকে নদীতে স্নান করা হয়। ঢাক বাজতে থাকে ঘাটে। পুরোহিত মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে সেই কলাগাছকে স্নান করান। কলেজ পড়া তরুণী থেকে অশীতিপর বৃদ্ধা সকলেই জড়ো হন নদীর ঘাটে। দুর্গাপুজোর সঙ্গে যুক্ত থাকা এই প্রথাকে চাক্ষুস করার জন্য ঘাটে ঘাটে ভিড় জমান অনেকেই। এরপর সেই কলাগাছকে নতুন শাড়ি পরিয়ে নিয়ে আসা হয় মূল মণ্ডপে।
আসলে বাংলার কৃষিভিত্তিক সমাজের ছবিও যেন ফুটে ওঠে এই নবপত্রিকা স্নানের মাধ্যমে। সপ্তমীর দিন এই রীতি পালিত হয়। একটি ছোট কলাগাছের সঙ্গে আরও ৮টি গাছের পাতা বেঁধে তা স্নান করানো হয়। এগুলির মধ্যে কলাগাছটিই স্পষ্ট ভাবে দেখা যায় বলে এই নিয়মকে অনেকে কলাবউ স্নানও বলে। ৯টি গাছের পাতা শক্তির ৯টি রূপকে তুলে ধরে— ব্রহ্মাণী (কলা), কালিকা (কচু), দুর্গা (হলুদ), কার্ত্তিকী (জয়ন্তী), শিব (কৎবেল), রক্তদন্তিকা (বেদানা), শোকরহিতা (অশোক), চামুণ্ডা (ঘটকচু), লক্ষ্মী (ধান)। সপ্তমীর সকালে যাবতীয় বিধি মেনে নবপত্রিকাকে স্নানের জন্য নদী বা জলাশয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর লাল পাড় সাদা শাড়িতে মুড়িয়ে সেটিকে গণেশের পাশে প্রতিস্থাপিত করা হয়। শুরু হয় পুজোর মূল পর্ব।