জামিন পেলেন নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা পলাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের স্ত্রী শতরূপা ভট্টাচার্য। এই প্রথম নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কেউ জামিন পেলেন। আজ সোমবার তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। এ দিন তাঁর জামিন মঞ্জুর করার পর বিচারপতি উল্লেখ করেন, অনেক আগেই শতরূপাকে জামিন দেওয়া উচিত ছিল। বিচারপতির মতে, তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়ে থাকার কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেনি ইডি। তিনি বিশেষ সিবিআই আদালতে যখন জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন তখনই তাঁকে জামিন দেওয়া উচিত ছিল। মূলত তাঁর বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ না মেলায় জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত।
আরও পড়ুন: সুজয়কৃষ্ণের সুপারিশেই বিধানসভায় তৃণমূলের টিকিট পেয়েছিলেন মানিক
এদিন শতরূপা জামিনের জন্য বেশ কিছু শর্ত বেঁধে দিয়েছে আদালত। সেক্ষেত্রে তিনি রাজ্যের বাইরে যেতে পারবেন না। তদন্তকারীদের সাহায্য করতে হবে। এছাড়াও, তাঁকে পাসপোর্ট জমা রাখতে হবে এবং নিম্ন আদালতে নিয়মিত হাজিরা দিতে হবে। এক লক্ষ টাকার বন্ডে এই জামিন মঞ্জুর করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন বিচারপতি তাঁর জামিন মঞ্জুর করে বলেন, ‘ইডি তাঁর কাছে এমন কিছুই পাইনি যে তাঁকে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত করতে হবে। তাছাড়া শতরূপা ভট্টাচার্য পালিয়ে যেতে পারেন বা নথি বিকৃত করতে পারেন এই মর্মে কোনও আশঙ্কা প্রকাশ করেননি ইডি।’ বিচারপতির মতে তিনি যেদিন বিশেষ আদালতে জামিনের আবেদন জানিয়েছিলেন সেদিনই তাঁর জামিন দেওয়া উচিত ছিল। শতরূপার আইনজীবী আদালতে দাবি করেন, তাঁকে বেআইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। কার্যত আইনজীবীর সেই দাবিকেই স্বীকৃতি দিলেন বিচারপতি।
উল্লেখ্য, একের পর এক নেতা মন্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পরে গতবছর গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত মানিক ভট্টাচার্যকে। তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ তছরুপ করার অভিযোগ এনেছিল ইডি। পাশাপাশি মানিকের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ এনেছিল গোয়েন্দা সংস্থা। কারণ তিনি বেশ কয়েকবার হাজিরা এড়িয়ে গিয়েছিলেন। পরে তদন্তে মানিকের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির হদিস পায় ইডি। তাতে নাম জড়ায় মানিক পত্নীর। ইডির অভিযোগ ছিল, এক মৃত ব্যক্তি সঙ্গে যৌথ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল মানিক পত্নীর। গত ২২ ফেব্রুয়ারি মানিক পত্নী ও পুত্র শৌভিক ব্যাঙ্কশাল আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এর পরে তাঁদের নিজেদের হেফাজতে নেয় ইডি।তারপর থেকেই জামিনের আবেদন জানান মানিক পত্নী।
উল্লেখ্য, এর আগে মানিকের স্ত্রীর জামিনের মামলায় বিচারপতির প্রশ্নের মুখে পড়ে ইডি। মানিক ভট্টাচার্য স্ত্রী শতরূপাকে হেফাজতে রেখে বিচারপ্রক্রিয়া চালানোর কী প্রয়োজন? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি'র কাছে উত্তর চেয়ে পাঠিয়েছিলেন বিচারপতি। একজন প্রভাবশালী হোক বা না হোক কেন তিনি জামিনের আবেদন করতে পারবেন না? তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি।