সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে শহরের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছিল দেরাদুনের যুবক। সেই বন্ধুত্ব গড়ায় ঘনিষ্ঠতায়। সেই সময় স্কুলছাত্রীর অশ্লীল ভিডিয়ো মোবাইলে তুলে রেখেছিল যুবক। তারপর থেকে ওই ধরনের আরও ভিডিয়ো পাঠানোর জন্য ওই ছাত্রীকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে ওই যুবক বলে অভিযোগ। রাজি না হওয়ায়, ওই ছাত্রীর হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক করে স্কুলের অনলাইন ক্লাস চলাকালীন নগ্ন ভিডিও পোস্ট করার অভিযোগ উঠল অভিযুক্তের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত ওই যুবককে দেরাদুন থেকে গ্রেফতার করেছে বড়বাজার থানার পুলিশ। মঙ্গলবার দেরাদুন থেকে ট্রানজিট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় অভিযুক্তকে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তকে ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হবে। পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের নাম বিষ্ণু সাহানি। অভিযুক্ত ওই যুবক দেরাদুনের ঋষিকেশের বাসিন্দা।
ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০১৯ সালে। অভিযোগ উঠেছে, ফেসবুকে রাহুল নামে একটি ভুয়ো প্রোফাইল তৈরি করে দেরাদুনের বাসিন্দা ওই যুবক। তারপরে শহরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ছাত্রীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে সে। কিছুদিনের মধ্যে সেই বন্ধুত্ব ঘনিষ্ঠতায় গড়ায়। তখন থেকে দু’জনের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথন শুরু হয়। বছর খানেক ধরে তাদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপে কথাবার্তা চলছিল।
অভিযোগ ওঠে, সেই সময় হোয়াটসঅ্যাপের ভিডিয়ো কলে গোপনে ওই ছাত্রীর কিছু অশ্লীল ভিডিয়ো ও ছবি তুলে রাখে অভিযুক্ত। তারপর থেকেই শুরু হয় চাপ দেওয়া। নির্যাতিতা ছাত্রীর কাছে ওই ধরনের আরও ভিডিয়ো পাঠানোর জন্য ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে বিষ্ণু। তা না দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাত্রীর সমস্ত গোপন ভিডিয়ো ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি দেয় বলে অভিযোগ।
এই ঘটনার পর ভয় পেয়ে যায় ১৪ বছরের ওই কিশোরী। বাধ্য হয়ে আরও দু-একটি ভিডিয়ো অভিযুক্তকে পাঠিয়ে দেয় ওই ছাত্রী। এখানেই শেষ হয়নি। চাহিদা বাড়তে থাকে অভিযুক্তের। এক সময় আর সহ্য করতে না-পেরে ঘটনার প্রতিবাদ করে ছাত্রীটি। অভিযুক্ত সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ ছিন্ন করে দেয় সে। কিন্তু এই ঘটনার পর আরও বড় অপরাধের পদক্ষেপ নেয় অভিযুক্ত।
অভিযোগ উঠেছে, কোনওভাবে ওই ছাত্রীর হোয়াটসঅ্যাপের ওটিপি হাতিয়ে নেয় বিষ্ণু। তারপর সেই ওটিপির সাহায্যে তার হোয়াটসঅ্যাপের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের কব্জায় করে নেয় সে। এতে কোন কোন গ্রুপের সঙ্গে ওই ছাত্রী যুক্ত রয়েছে বা তার যোগাযোগের যাবতীয় তথ্য অভিযুক্তের নাগালে চলে আসে। গত জুলাই মাসে অপরাধের চূড়ান্ত সীমা পার করে দেয় ওই যুবক। ছাত্রীটির স্কুলের অনলাইন ক্লাস চলাকালীন তার নম্বর থেকে তারই একটি নগ্ন ভিডিয়ো স্কুলের গ্রুপে পোস্ট করে দেয় অভিযুক্ত। এতেই শোরগোল পড়ে যায় ওই ছাত্রীর স্কুলে। এই ঘটনায় স্কুলের তরফ থেকে ওই ছাত্রীকে শোকজ করা হয়। তখনই স্কুল ও পরিবারকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে ছাত্রীটি। এ ঘটনার পরইস্কুলের পরামর্শে বড়বাজার থানায় ওই যুবকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ছাত্রীটির পরিবার।
অভিযোগ পেয়ে তদন্তে নামে বড়বাজার থানার পুলিশ। কিন্তু তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অভিযুক্ত যুবক নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে ফেলেছে। সেই ডিলিট হওয়ার প্রোফাইল ছাড়া পুলিশের কাছে আর তেমন কোনও উৎস ছিল না। তারপর অনেক কষ্টে শেষে পুলিশ জানতে পারে, ওই যুবক দেরাদুনের ঋষিকেশের বাসিন্দা। এরপরই পুলিশের একটি টিম দেরাদুনে ওই যুবকের ঠিকানায় গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্তকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, ২৫ বছরের ওই যুবক আইআইটি পাশ। স্থানীয় আদালতে তুলে ট্রানজিট রিমান্ডে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়।