রাজ্য নিরাপত্তা কমিশন গঠন নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। এবার সেখানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি মেনে নিল নবান্ন। তাই সচিবালয়ের সম্মতি নিয়ে রাজ্য নিরাপত্তা কমিশনের পুনর্গঠন করলেন রাজ্যপাল। এই কমিশনে পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আর মুখ্যমন্ত্রীর পরই এই কমিশনের দ্বিতীয় সদস্য হলেন শুভেন্দু অধিকারী।
আর কারা থাকছেন নিরাপত্তা কমিশনে? জানা গিয়েছে, পদাধিকার বলে এই কমিশনের বাকি সদস্যরা হলেন, রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, রাজ্য পুলিশের ডিজি, অবসরপ্রাপ্ত প্রাক্তন বিচারপতি অসীম রায়, রাজ্য মহিলা কমিশনের সভানেত্রী লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান অনন্যা চক্রবর্তী, এসএসকেএম হাসপাতালের ডিরেক্টর মৃণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মাত্র দু’জন।
কী এই নিরাপত্তা কমিশন? রাজ্যে এই কমিশন দীর্ঘদিন ধরেই ছিল না। বামফ্রন্টের আমলেই এই কমিশনকে ভোঁতা করা হয়েছিল। তাই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারকে ভর্ৎসনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু একুশের নির্বাচনে বিজেপির পরাজয়ের পরই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি তুলতে থাকেন এই কমিশন গড়তেই হবে। ২০২১ সালের জুন মাসে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করে দাবিপত্র পেশ করেন তিনি। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ২০০৬ সালে প্রকাশ সিং বনাম কেন্দ্রীয় সরকার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট একটি মাইলফলক রায় দিয়েছিল। সমস্ত রাজ্যকে নিরাপত্তা কমিশন গঠন করতে হবে বলা হয়েছিল। এই কমিশন রাজ্যে পুলিশের কার্যকলাপের উপর নজর রাখবে। এই কমিশন গঠন করতে হবে যাতে রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে একটি স্বাধীন কমিটি হিসাবে অস্তিত্ব থাকে।
ঠিক কী বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট? নিরাপত্তা কমিশন গঠনের তিনটি ফর্মুলা বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে বলা হয়েছিল—রিবেরো কমিটি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বা সোরাবজি কমিটির মধ্যে যে কোনও একটি কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কমিটি গঠন করতে হবে। ওই তিন কমিটিরই সুপারিশ ছিল, রাজ্য নিরাপত্তা কমিশনে বিরোধী দলনেতাকে অন্যতম সদস্য করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ২৭টি রাজ্য ইতিমধ্যেই রাজ্য নিরাপত্তা কমিশন গঠন করেছে। ওড়িশা এবং জম্মু কাশ্মীর এই কমিশন গঠন করেনি। আর পশ্চিমবঙ্গে যে নিরাপত্তা কমিশন গঠন করা হয়েছিল তাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে মানা হয়নি। তাই ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারকে ভর্ৎসনা করেছিল।তবে এবার নবান্ন সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে সম্মান জানিয়েছে।