রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টারস্ট্রোকে কেন্দ্রের প্রকল্প কার্যত ভোঁতা হয়ে গেল। কারণ রাজ্যের সকলেই সরকারি প্রকল্প ‘স্বাস্থ্যসাথী’র সুবিধা পাবেন বলে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড প্রকাশ করেছেন তিনি। এখানে কোনও বৈষম্য রাখা হয়নি। রাজ্যের নাগরিক হলেই মিলবে এই পরিষেবা। সেখানে এই রাজ্যে কেউ এখনও প্রস্তুতও নন কেন্দ্রের প্রকল্প আয়ুষ্মান ভারত গ্রহণ করতে। কারণ তা সকলের জন্য নয়। সেখানে বেশ কিছু নিয়মকানুন আছে।
এই প্রকল্প সমস্ত মানুষের জন্য ঘোষণা করে দেওয়ায় আয়ুষ্মান ভারত যোজনা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে নিশানা করছে বিজেপি। যদিও স্বাস্থ্যসাথীতে বর্তমানে রাজ্যের ৭ কোটি মানুষ এই সুবিধা পান। পয়লা ডিসেম্বর থেকে চালু হয়ে যাবে এই পরিষেবা। পরিবারের অভিভাবকের নামে ৫ লক্ষ টাকার বিমা সংক্রান্ত কার্ড দেখিয়ে রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালে তো বটেই, ভেলোর এবং এইমসেও চিকিৎসা করানো যাবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলার সব পরিবার স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পাবে। ছাত্র, যুব, হিন্দু, মুসলিম দলিত, আদিবাসী, শহর, গ্রাম—সকলকে ১০০ শতাংশ আনা হচ্ছে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায়। ১ ডিসেম্বর থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বেকার–ডাক্তার, কৃষক সবাই থাকবে প্রকল্পের আওতায়।’
এই মাস্টারস্ট্রোকের কাছে আয়ুষ্মান ভারত কার্যত ফিকে হয়ে গিয়েছে। তাই চেঁচামিচি করতে শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। বিজেপি’র নব্য কো–ইনচার্জ অমিত মালব্য কটাক্ষ করেন, ‘পিসির অপরিকল্পিতভাবে তৈরি করা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প আদতে গরীব এবং প্রকৃত অভাবীদের সাহায্য করতে ব্যর্থ হয়েছে। অধিকাংশ সুপার–স্পেশালিটি হাসপাতাল স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের পরিষেবা দেয় না। পরিকাঠামোর উন্নতি এবং হাসপাতালের সংখ্যা না বাড়িয়ে শুধুমাত্র প্রকল্পের আওতায় মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি করলেও তা মানুষের কোনও উপকারে আসবে না।’
যদিও মুখ্যমন্ত্রী জানান, ইতিমধ্যেই ৭৫ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় রয়েছেন। আরও আড়াই কোটি বাড়ছে। প্রায় ১০ কোটি নাগরিক চলে আসবে স্বাস্থ্যসাথীর আওতায়। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে বেসরকারি হাসপাতালেও সুবিধা মিলবে। সুতরাং অমিত মালব্যের কথা কার্যত ধোপে টিকছে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। এবার দ্রুততার সঙ্গে ‘স্বাস্থ্যসাথী’–সহ নানা রাজ্য সরকারি প্রকল্প ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে তাকেই সামনে আনার কথা বললেন তিনি। জানালেন যে আগামী কয়েকদিন রাজ্যের বিভিন্ন ব্লকে ক্যাম্প করা হবে সরকারের পক্ষ থেকে। সেখানেই যে যা সুবিধা পাননি অথচ প্রত্যাশা করছেন, তার জন্য আবেদন করতে পারবেন। সহজেই কাজ হবে।
রাজ্যে চালু হয়নি মোদী সরকারের আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প। ওই প্রকল্পে রাজ্যকেও একটা অংশ দিতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, রাজ্যের অংশ থাকলেও রাজনৈতিক প্রচার করছে বিজেপি। প্রকল্প চালু না হওয়ায় শাসক দলকে ক্রমাগত নিশানা করে চলেছেন বিজেপি নেতারা। ‘স্বাস্থ্যসাথী’র কার্ড প্রকাশ্যে এনে তার সঙ্গে কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত যোজনা’র তুলনাও করেন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে কেন্দ্রে চিকিৎসার ৬০ শতাংশ খরচ দেয়, ৪০ শতাংশ আমাদেরই দিতে হয়। আর আমাদের প্রকল্পে ১০০ শতাংশ খরচই দিই আমরা। এতে অনেক বেশি মানুষ উপকৃত হন।’