কলকাতা এবং হাওড়ার মধ্যে জলপথে পরিবহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন এই জলপথ পরিবহণে কয়েক হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। সংখ্যাটা বছরে প্রায় কয়েক কোটিতে পৌঁছে যায়। কিন্তু, এরই মধ্যে একাধিক সমস্যায় জর্জরিত হুগলির জলপথ পরিবহণ। হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতি লিমিটেডে দীর্ঘদিন ধরেই অচলাবস্থা চলছে। দীর্ঘদিন ধরেই প্রবল অর্থসঙ্কটে ভুগছে এই সংস্থা। যার ফলে কর্মীদের বকেয়া বেতন যেমন মেটাতে পারছে না, তেমনি লঞ্চ মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় তীব্র অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন কর্মীরা এবং লঞ্চ পরিবহণ ব্যবস্থা। লঞ্চগুলির ফিটনেস সার্টিফিকেটর মেয়াদ আগামী জানুয়ারি মাসে শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু, নতুন ফিটনেস করাতে প্রচুর টাকার প্রয়োজন। কিন্তু, সেই টাকা এখন সমিতির হাতে নেই। এই ফিটনেস সার্টিফিকেট না হলে এই সমস্ত রুটে লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে কর্মীদের পাশাপাশি যাত্রীরাও সমস্যায় পড়বেন।
আরও পড়ুন: একলাফে অনেকটা বাড়ল লঞ্চের ভাড়া, পকেটে চাপ পড়ল ৩ জেলার নিত্যযাত্রীদের
সমবায় সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের অধীনে ১৩টি বড় লঞ্চ ও ৮টি ছোট কাঠের লঞ্চ রয়েছে। এই লঞ্চগুলি হাওড়া থেকে শোভাবাজার, বাগবাজার, আর্মেনিয়াম ঘাট, বাবুঘাট সহ আরও বেশ কিছু রুটে চলে। কর্মচারীরা জানান দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চলে আসছে। কর্মীদের ঠিকমতো বেতন দেওয়া হচ্ছে না। নীলয় চক্রবর্তী নামে এক কর্মী জানান, এই সংস্থা বর্তমানে লোকসানে চলছে। সমবায় সমিতির স্পেশ্যাল অফিসার জয় ধর দুরাবস্থার কথা স্বীকার করে জানান, কোভিডের সময় থেকে সমস্যা হচ্ছে। তখন লঞ্চগুলি বন্ধ হয়ে পড়েছিল। রাজ্য সরকার এরজন্য দু দফায় ৮ কোটি টাকা দিয়েছিল।তবে লঞ্চ রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মচারীদের বেতন দেওয়ায় সেই টাকা শেষ হয়ে যায়। তবে পরিবহণ মন্ত্রীর কাছে প্রায় দেড় কোটি টাকা চেয়ে আবেদন করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, লঞ্চ পরিষেবা অক্ষুন্ন রাখার জন্য ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্টের (আইডব্লিউটি) শংসাপত্র প্রয়োজন। নিয়ম রয়েছে, ওই শংসাপত্র পেতে গেলে লঞ্চগুলি প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ‘ড্রাই ডক’ করে মেরামত করতে হবে। কিন্তু, সেই রক্ষণাবেক্ষণের টাকা না থাকায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন কর্মীরা। জানা গিয়েছে, এই পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন প্রায় ৩০০ জন কর্মী । তাদের ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
উল্লেখ্য, সালের পরে পরে সমবায়টি ‘রেজিস্ট্রার অব কোঅপারেটিভ সোসাইটি’র নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বর্তমানে ওই সমবায় সমিতি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্যের সমবায় দফতর নিযুক্ত একজন স্পেশ্যাল অফিসার। তাঁর বক্তব্য, লঞ্চের ভাড়া না বাড়ালে এবং সরকারি হস্তক্ষেপ না হলে ভবিষ্যতে হয়ত এই গুরুত্বপূর্ণ লঞ্চ পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাবে। কর্মীদের বক্তব্য, অন্যান্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ভাড়া বাড়লেও এখানে দীর্ঘদিন ধরে ৬ টাকা ভাড়া রয়েছে।ফলে লোকসান হচ্ছে। যে সময় ডিজেলের দাম ছিল লিটারে ৫০ টাকা সেই সময় টিকিটের মূল্য ছিল ৬ টাকা। কিন্তু, এখন ডিজেলের দাম ৯৩ টাকা হলেও টিকিটের দাম একই রয়েছে। এই অবস্থা টিকিটের দাম কিছুটা বাড়ালে সেই ক্ষেত্রে এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ মিলতে পারে। তবে কর্মীদের বকেয়া থাকলেও আগামী সোমবার ৮.৩৩ শতাংশ পুজোর বোনাস দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্পেশাল অফিসার।