এখন আর তিনি ফেসবুক লাইভে আসেন না। গান গেয়ে শোনান না। দাপুটে বক্তব্যও আর শোনা যায় না। ওহ লাভলি—এটাও এখন অতীত। হ্যাঁ, তিনি কামারহাটির তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মদন মিত্র। তবে আজ, বৃহস্পতিবার বিধানসভায় তাঁকে দেখা গেল। সেই স্মার্ট চেহারা আর নেই। ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছেন। সেই অবস্থাতেই পরনে সবুজ শার্ট, প্যান্ট এবং একটা টুপি মাথায় দিয়ে হাজির হলেন দলের কালারপুল নেতা। ভেঙে যাওয়া চেহারাতেও চোখে চশমা পরে মেজাজটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন মিত্র। বাঁ– হাতের ব্যান্ডেজটা দেখা যাচ্ছে। পরিচিতরা প্রথম দর্শনে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। তারপর বিধানসভায় পা রাখতেই মদনের চেহারা দেখে চমকে ওঠেন অনেকে।
এদিকে মদনকে বিধানসভায় পৌঁছতে সাহায্য নিতে হয়েছে অপর একজনের। গাড়িতে বসেই হাজিরা খাতায় সই করে দেন কামারহাটির বিধায়ক। এখনও তিনি পুরোপুরি ফিট হতে পারেননি। তবে ওজন অনেক ঝরে গিয়েছে। বহুদিন ধরে শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক মদন মিত্র। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হন মদন মিত্র। তাঁর নিউমোনিয়া হয়ে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। হাসপাতালের বেডে হঠাৎ খিঁচুনি শুরু হলে মদন মিত্রের একটি হাত ছিটকে লাগে বেডের লোহার রেলিংয়ে। চোট পান তিনি। তাঁর কাঁধের কাছে একটি হাড় ভাঙে।
অন্যদিকে তারপর মেডিক্যাল বোর্ড তৈরি হওয়া এবং অস্ত্রোপচার হয়। সেসব কাটিয়ে বাড়ি ফেরেন মদন মিত্র ভবানীপুরে। তারপরও কাটে কিছুদিন। কিন্তু শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ায় আবার একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে ভর্তি হন। সেখান থেকে ফেরার পর চলে লম্বা বিশ্রাম। সংবাদের বাইরে ছিলেন রাজনীতির গ্ল্যামারাস বয়। এরপর আজ মদন মিত্র অনেকদিন পর এলেন বিধানসভায়। কামারহাটির এই তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ককে আবার জনসমক্ষে দেখা গেল। তবে এ যেন অন্য মদন মিত্র। সেই রাশভারী জেহারা নেই, মুখে মজার হাসি নেই, মজার কথা নেই, সেই শব্দ নেই। মৃদুভাষী মদনকে দেখে তাই চমকে গিয়েছেন অনেকে।
আরও পড়ুন: ‘সন্দেশখালিতে আরএসএসের বাসা রয়েছে’, অশান্তির আবহ বিজেপি-ইডির তৈরি দাবি মমতার
এছাড়া মদন মিত্রের হাঁটা দেখা গেল খুব ধীর গতিতে। একদা এই মদন মিত্র ট্যাক্সি ইউনিয়ন থেকে উঠে আসেন। তারপর দাপিয়ে রাজনীতি থেকে মন্ত্রী। সঙ্গে গান, নাচ থেকে সিনেমা—সর্বত্র অবাধ বিচরণ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছের নেতাদের মধ্যে একজন মদন মিত্র। আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উপস্থিত হযেছিলেন বিধানসভায়। তবে কালারফুল নেতাকে এভাবে দেখে তিনি মনে কষ্টই পেয়েছেন। তাই নিজের কাজ মিটিয়ে ফিরে গেলেন। তবে মদন মিত্র দ্রুত ফিট হয়ে ফিরে আসুন, আর একবার জোর গলায় বলুন— ‘ওহ লাভলি’। এটাই শুনতে চাইছেন তাঁর অনুগামীরা।