বসিরহাটের তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান না থেকেও আছেন। এর আগে তাঁর দাপট দেখা যেত শুধুমাত্র বসিরহাটেই। তবে এখন তাঁর প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে বাংলার রাতনীতি জুড়ে। ইডির ওপর হামলায় উস্কানি, রেশন দুর্নীতির মতো মামলায় অভিযুক্ত শাহজাহান অবশ্য পলাতক বিগত প্রায় চার সপ্তাহ ধরে। এরই মাঝে এবার রাজ্যের মন্ত্রী তথা খড়দার তৃণমূল বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন শাহজাহানকে নিয়ে। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদে ব্রিটিশরা অনেক স্বাধীনতা সংগ্রামীকেই খুঁজে পায়নি। এখনও বহু রাজ্যে অনেক অপরাধী ঘুরে বেড়াচ্ছে। সব সময় যে তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে, এমন কোনও মানে নেই। তবে এখন অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বেরিয়েছে। সেগুলির দ্বারা যদি খুঁজে পাওয়া যায়।' (আরও পড়ুন: প্রয়াত অতীন ঘোষের মা, পুজোর সময় শাড়িতে আগুন লেগে ভরতি হয়েছিলেন হাসপাতালে)
আরও পড়ুন: বাংলার প্রাক্তন সাংসদের পুত্রবধূর মৃত্যু গাড়ি দুর্ঘটনায়, আহত রাজনীতিবিদ ছেলে, নাতি
পরে অবশ্য এই মন্তব্যের সঙ্গে শোভনদেব যোগ করেন, 'শেখ শাহজাহান যদি অপরাধ করে থাকে, তাহলে আদালত বিচার করবে। তাঁকে যথাযথ শাস্তি দেবে ৷ সেটাই কাম্য ৷ আমি বা আমার দল কোনওভাবে অপরাধকে প্রশ্রয় দিই না।' এদিকে শোভনদেব নিজের কথায় 'ব্যালেন্স' রাখার চেষ্টা করলেও রাজ্যের অপর এক মন্ত্রী শাহজাহানকে 'ভদ্রলোক' আখ্যা দিয়েছেন। শাহজাহান প্রসঙ্গে রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, 'দলের অস্বস্তির কোনও ব্যাপার নেই ৷ একজন ভদ্রলোককে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আমি যদি তাঁকে না পাই, তাহলে আমাকে অন্য কারও মাধ্যমে তাঁকে খুঁজে পেতে হবে।' প্রসঙ্গত, শেখ শাহজাহানের বাড়িতে হানা এবং ইডি কর্তাদের ওপর হামলার প্রায় চার সপ্তাহ হতে চলল। এর মাঝে সম্প্রতি আবারও শাহজাহানের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। তবে এই অভিযানে কোনও কিছুই তদন্তকারীদের হাতে আসেনি।
এর আগে গত গত ৫ জানুয়ারি কী ঘটেছিল? সেদিন সকালে ইডির আধিকারিকরা যখন শাহজাহানের বাড়িতে পৌঁছন, তখন দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। শেখ শাহজাহানের দেখা মেলেনি। ইডির অফিসাররা ও সিআরপিএফ-এর জওয়ানরা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দরজা খুলতে বলেছিলেন। কিন্তু এসবের মধ্যেই মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে এক দল উন্মত্ত জনতা লাঠি নিয়ে এসে ইডি আধিকারিকদের ঘিরে ফেলেন। ইডির দাবি, প্রায় ৮০০-১০০০ জনের উন্মত্ত জনতা চড়াও হয়েছিল তদন্তকারী দলের উপর। আক্রান্ত হয়েছেন ইডির অফিসাররা। ইডির তিন জন অফিসার হাসপাতালে ভরতি। এদিকে হামলার দায় পালটা ইডির উপরেই চাপিয়েছে বাংলার শাসক শিবির। তৃণমূলের মুখপাত্র থেকে শুরু করে রাজ্যের মন্ত্রীদের দাবি, অভিযানের ব্যাপারে ইডি আগাম কোনও তথ্য দেয়নি। তথ্য দিলে পর্যাপ্ত পুলিশি ব্যবস্থা থাকত। আর তাতে পরিস্থিতি এতটা খারাপ হত না।
এদিকে সেই ঘটনায় ইডির বিরুদ্ধে এফআইআর নথিভুক্ত করে ন্যাজাট থানার পুলিশ। শাহজাহানের বাড়ির কেয়ারটেকারের অভিযোগের ভিত্তিতেই সেই অভিযোগ দায়ের করে পুলিশ। অভিযোগ ছিল, ওয়ারেন্ট ছাড়াই শেখ শাহজাহানের বাড়ির তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়েন ইডি আধিকারিকরা। পরে সেই এফআইআর-এর ওপরে স্থগিতাদেশ দেয় হাই কোর্ট। এদিকে ইডির অভিযোগের প্রেক্ষিতেও পৃথক এফআইআর হয়েছে। শাহজাহান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে সেই এফআইআর। রাজ্য পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডিজি রাজীব কুমার ও বসিরহাট পুলিশ জেলার এসপি জোবি থমাসের কাছে ইমেলের মাধ্যমে অভিযোগ জানিয়েছে ইডি। সেই অভিযোগে ইডি অবশ্য উল্লেখ করে, কোর্ট ওয়ারেন্ট নিয়েই শাহজাহানের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিলেন আধিকারিকরা। সেই ঘটনায় এখনও অনেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। তবে শাহজাহান নিজে অধরা। এছাড়াও অজ্ঞাতপরিচয়ের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আরও একটি মামলা রুজু করেছে ন্যাজাট থানার পুলিশ। সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা, ভাঙচুর ও সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে সেই মামলা রুজু করা হয়।