সকলেই সচিন তেন্ডুলকরের সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্ত স্বয়ং 'ক্রিকেটের ভগবান' নিজে যখন কারও সঙ্গে দেখা করবেন বলে উদগ্রীব হয়ে থাকেন, তিনি যে স্পেশাল হবেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আর সেই 'স্পেশাল' আমির হুসেন লোনের সঙ্গে দেখা করলেন সচিন। যে জম্মু ও কাশ্মীরের ছেলে আমিরের দু'হাতই নেই। পা দিয়ে বল করেন। কাঁধ এবং ঘাড় দিয়ে ব্যাটিং করেন। তাঁর সেই ইচ্ছাশক্তি এবং মানসিক দৃঢ়তা দেখে অভিভূত হয়ে গিয়েছেন সচিন। তাঁকে নিজের স্বাক্ষর করা ব্যাট দেন। সঙ্গে বলেন, ‘তুমিই রিয়েল হিরো। তুমি যা করেছ, সেটা কেউ পারবে না।’
জম্মু ও কাশ্মীরে ছুটি কাটানোর মধ্যেই আমিরের সঙ্গে দেখা করেন সচিন। সম্ভবত তাঁর বাড়িতেই আসেন আমির। সচিনকে দেখতে পেয়েই মাথানত করে প্রণাম করেন। তাঁকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বসতে বলেন সচিন। তারপর খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। সচিনও যেমন আমিরকে দেখে অভিভূত হয়ে যান, তেমনই জম্মু ও কাশ্মীরের ছেলে যে ‘ক্রিকেটের ভগবান’-কে দেখে ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না, সেটা তাঁর চোখেমুখেই ফুটে উঠছিল। যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে স্বয়ং সচিনের সামনে বসে আছেন তিনি।
সেই আবেগের বিস্ফোরণের মধ্যেই নিজেকে কিছুটা সামলে আমির বলতে থাকেন, 'আজ এত আনন্দ হচ্ছে স্যার, এত আনন্দ হচ্ছে স্যার। যখনই জানতে পারলাম যে আপনি আসছেন, তখনই......।' সঙ্গে তিনি বলেন, 'জীবনে কখনও হার মেনে নিইনি। যা যা স্বপ্ন আছে, তা পূরণ করার লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে গিয়েছি। ধীরে-ধীরে শিখতে থাকি। কলেজে পৌঁছাই। জম্মু ও কাশ্মীরের প্যারা ক্রিকেট দলে সুযোগ পাই। ২০১৩ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলি। আজ আমি যেখানে এসেছি, সেটা আপনার কারণেই হয়েছে। সবথেকে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন আপনিই (একগাল হাসি নিয়ে)।'
সেটা শুনে সচিন বলেন, ‘তুমিই রিয়েল হিরো। তুমি যা করেছ, সেটা কেউ পারবে না। আট বছরের একটা ছেলে এত বড় ধাক্কা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে, মানসিক ধাক্কা কাটিয়ে, জীবনে এতদূর এগিয়ে অন্যদের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠার বিষয়টা বিশাল বড় ব্যাপার। তুমি হয়ত জান না যে তুমি কী করেছ।’ তা শুনে চোখের কোণটা সম্ভবত চিকচিক করে ওঠে আমিরের। তারইমধ্যে আমিরকে নিজের স্বাক্ষর করা ব্যাট এনে দেন সচিন। তাতে লেখা ছিল, ‘তুমি রিয়েল হিরো। এরকমভাবেই অনুপ্রেরণা জোগাতে থাক।’
আর আমিরের সেই লড়াইয়ে যে তিনি কতটা মুগ্ধ হয়েছেন, তা গত মাসেই জানিয়েছিলেন সচিন। ৩৪ বছরের আমিরের একটি ভিডিয়ো রিটুইট করে সচিন বলেছিলেন, ‘অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছে আমির। এই ভিডিয়োটা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছি। খেলাটার প্রতি ওর যে কতটা ভালোবাসা এবং অধ্যবসায় আছে, তো এটা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। আশা করছি যে একদিন ওর সঙ্গে দেখা করতে পারব আমি এবং ওর থেকে একটি জার্সি নিতে পারব। লাখ-লাখ মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্য ধন্যবাদ।’ আর সেই টুইটের দেড় মাসের মধ্যে আমিরের সঙ্গে দেখা করলেন সচিন।
আমির হুসেন লোনের ইতিবৃত্ত
১) জম্মু ও কাশ্মীরের বিজবেহারার বাসিন্দা হলেন ৩৪ বছরের আমির। সচিনের সঙ্গে দেখা করার জন্য মুখিয়ে ছিলেন তিনি।
২) আমিরের বয়স যখন আট ছিল, তখন দুর্ঘটনায় দুটি হাতই হারিয়ে ফেলেন।
৩) তাঁর ক্রিকেটীয় প্রতিভা প্রথম চোখে পড়েছিল এক শিক্ষকের। তিনিই আমিরকে প্যারা-ক্রিকেটে নিয়ে আসেন। আপাতত জম্মু ও কাশ্মীর প্যারা দলের অধিনায়ক হলেন তিনি।
৪) সংবাদসংস্থা এএনআইকে একটি সাক্ষাৎকারে আমির বলেন, ‘২০১৩ সাল এবং ২০১৮ সালে জাতীয় পর্যায়ে খেলেছি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একটি ম্যাচ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছি। তারপর আমি নেপাল, শারজা এবং দুবাইয়ে খেলেছি। আমায় পা দিয়ে বোলিং করতে দেখে এবং ঘাড় ও কাঁধ দিয়ে ব্যাটিং করতে সবাই হতবাক হয়ে যান।’
আরও পড়ুন: জম্মু-কাশ্মীরের প্যারা ক্রিকেটারের লড়াইয়ে মুগ্ধ গৌতম আদানি, দিলেন সাহায্যের আশ্বাস