মুখগুলো দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে বিশ্বকাপটা হাতে না আসায় ভিতরে-ভিতরে কতটা কষ্ট হচ্ছে। সকলের সামনে কোনওক্রমে চোখের জল সামলে রাখছেন। আর সেই কঠিন সময় ভারতীয় খেলোয়াড় এবং সাপোর্ট স্টাফদের মনোবল বাড়ানোর জন্য টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুমে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁদের সঙ্গে একেবারে খোলাখুলি কথা বলেন। দেন ‘পেপটক’। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের কিছুটা হাসতে বলেন। করমর্দন করেন রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে। মহম্মদ শামিকে বুকে জড়িয়ে নেন। রবীন্দ্র জাদেজা, জসপ্রীত বুমরাহ, শুভমন গিল, শ্রেয়স আইয়ার, কুলদীপ যাদব, কেএল রাহুলদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের কষ্ট কিছুটা লাঘবের চেষ্টা করেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁদের দিল্লিতে আমন্ত্রণও জানান। সেইসঙ্গে মোদী একটা জিনিস বুঝিয়ে দেন যে টিম ইন্ডিয়া যেভাবে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল, সেটাও সকলে করতে পারে না। একটানা ১০টি ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠার বিষয়টাও অত্যন্ত গর্বের। আর একটা খারাপ দিন যেতেই পারে। কিন্তু পরে আবার সুযোগ আসবে।
কোন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কী কথা বলেন মোদী?
রবিবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট রজার বিনির সঙ্গে ভারতের ড্রেসিংরুমে আসেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্রথমেই রোহিত এবং বিরাটের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। তাঁর একদিকে ছিলেন রোহিত। অপরদিকে ছিলেন বিরাট। বিরাটের কাঁধে রাখেন বাঁ-হাত। ডানহাত দিয়ে চাপড়ে দেন রোহিতের পিঠ। তারপর দু'হাতে দু'জনের কাঁধ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলতে থাকেন, 'তোমরা ১০-১০টি ম্যাচ জিতে এসেছ। এটা হতেই পারে। দেশ তোমাদের দেখছে।' সেইসঙ্গে তিনি বলেন, 'আরে একটু হেসে নাও।'
প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে কিছুটা হাসেন রোহিত এবং বিরাট। তবে সেই হাসিটা যে ভিতর থেকে আসছিল না, বরং প্রধানমন্ত্রীর মতো মানুষকে শ্রদ্ধা দেখাতে কিছুটা হেসেছেন, সেটা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল। তারইমধ্যে রোহিতের হাত চেপে ধরেন মোদী। বিরাটের পিঠ চাপড়ে দেন। তারপর দু'জনেরই হাত ধরে মোদী বলেন, ‘আমি ভাবলাম যে তোমাদের সকলের সঙ্গে দেখা করে নিই।’ মোদীকে ধন্যবাদ জানান রোহিত এবং বিরাট।
তারপর ভারতীয় দলের হেড কোচ দ্রাবিড়ের সঙ্গে দেখা করেন মোদী। দ্রাবিড়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাঁর সঙ্গে করমর্দন করেন। পিঠ চাপড়ে দেন। সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলতে থাকেন, ‘কী রাহুল? কেমন আছ? তোমরা খুব পরিশ্রম করেছ। কিন্তু….।’ দ্রাবিড়ও কিছু বলতে থাকেন। দ্রাবিড়ের পরে জাদেজার সঙ্গে করমর্দন করেন মোদী। তাঁকে গুজরাটিতে কিছু বলতে থাকেন। ততক্ষণে এগিয়ে আসেন গিল। ভারতের তারকা ওপেনারের সঙ্গে করমর্দন করেন মোদী।
তারপর শামির দিকে এগিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী। বাকিদের মতো শামিও করমর্দন করছিলেন। তবে চারটি ম্যাচ কম খেলেই এবার বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহককে নিজের বুকে টেনে নেন মোদী। তিনি বলতে থাকেন, 'শামি...এবার খুব ভালো খেলেছ।' শামিকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেওয়ার পর তাঁর পেস বোলিং পার্টনার বুমরাহের সঙ্গে কিছুটা মজা করেন মোদী। ড্রেসিংরুমে কিছুটা হাসি ফেরানোর জন্য বুমরাহকে প্রশ্ন করেন, ‘গুজরাটি বলতে পার?’ বুমরাহ বলেন যে ‘থোড়ু, থোড়ু’। তারপর তাঁর গুজরাটিতে কথা বলতে থাকেন।
ভারতীয় দলের তারকা পেসার বুমরাহের পর শ্রেয়স, কুলদীপ, রাহুলের সঙ্গে করমর্দন করেন মোদী। কুলদীপ কিছুটা হাসেন। রাহুল অবশ্য একেবারে বিমর্ষ হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এসেছেন বলেই বাইরে আসেন। নাহলে ভিতরে কোথাও একটা ছিলেন। সেই পরিস্থিতিতে মোদী বলেন, ‘তোমরা খুব পরিশ্রম করেছ। এরকম হতেই পারে। একে অপরের মনোবল বাড়াতে থাক। তোমরা ফাঁকা হলে দিল্লিতে চলে এস। আমরা দিল্লিতে গল্পগুজব করব। সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’