তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি নিজের পদ ছেড়ে দিতে চাইলেন। আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম প্রস্তাব করলেন। এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে যায় তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে। কালীঘাটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে এই প্রস্তাব উঠতেই তা খারিজ করে দেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এই পর্যন্ত খবর সবারই প্রায় জানা। তাহলে অজানা তথ্য কোনটি? এই পদ ছেড়ে দেওয়ার পিছনে অনেকগুলি কারণ আছে। যা তিনি নিজেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন দলের অন্দরে। কিন্তু সব শুনেও প্রবীণ নেতাকেই সম্মান জানিয়েছেন সবাই।
কেন এমন চাইলেন সবার বক্সিদা? একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের অভাবনীয় ফলের পর যখন তৃণমূল ভবনে প্রবেশ করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তখন তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন সুব্রত বক্সি। তারপর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হন অভিষেক। এবার তৃণমূলে নবজোয়ার কর্মসূচি নিয়ে গ্রামবাংলায় যে সাড়া ফেলে দিয়েছেন অভিষেক তাতে অনেকেই চমকে গিয়েছেন। তাছাড়া তাঁর রোড–শো থেকে জনসংযোগ যাত্রায় যে জনসমুদ্র হয়েছিল সেটা সবার নজর কেড়েছে। ৫১ দিন ঘরবাড়ি ছেড়ে যেভাবে রাস্তায় পড়েছিলেন তাতে এই পদও তাঁর প্রাপ্য বলে মনে করেন সুব্রত বক্সি। তাই নিজের পদ ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন অভিষেককে।
আর কী জানা যাচ্ছে? তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার দিন থেকেই সুব্রত বক্সি রাজ্য সভাপতি পদে রয়েছেন। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদও। আর মমতার প্রিয় বক্সি দা ছোট থেকে দেখা অভিষেককে বড় হতে দেখেছেন। আর আজ সেই অভিষেক গোটা বাংলাকে নিজের হাতের তালুর মতো চেনে। তাই প্রবীণ নেতা সেটা উপলব্ধি করে নবীনকে পদ ছেড়ে দিতে চাইলেন। তিনি মনে করেন এখন বাকি কাজটা অভিষেকই করতে পারবে। আর তিনি অভিষেককে আশীর্বাদ করে সাংগঠনিক কাজ থেকে অব্যাহতি নিয়ে সংসদীয় রাজনীতিতে মন দিতে চান। কিন্তু অভিষেক নিজেই বক্সিদাকে ছাড়তে নারাজ। তাই তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে হয়েছে, ‘এই নিয়ে আর কোনও আলোচনা যেন না হয়।’
কিন্তু বক্সি দা কী বলছেন? এই সুব্রত বক্সি একসময় একই সঙ্গে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন। তাই নির্বাচনী বৈঠকে আবেগে ভেসে সবার প্রিয় বক্সি দা বলেন, ‘আমার এখন শরীর খারাপ। তাই রাজ্যের কোথাও সেভাবে যেতে পারি না। শুধু ভবানীপুরের পার্টি অফিস আর তৃণমূল ভবনে যাই। রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হোক অভিষেককে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ও ভাল কাজ করছে। জনসংযোগ যাত্রার মতো কর্মসূচি সামাল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমরা সবাই দেখেছি। আমি এক সময়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং রাজ্য সভাপতি একসঙ্গে ছিলাম। আজ সময় এসেছে অভিষেককে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি রাজ্য সভাপতিও করা হোক।’ পাল্টা অভিষেক বক্সি দাকে বললেন, ‘কোনও প্রশ্নই ওঠে না, তুমিই থাকবে রাজ্য সভাপতি।’