বঙ্গ বিজেপির প্রার্থী তালিকা যত দীর্ঘতর হচ্ছে, ততই ছড়াচ্ছে বিক্ষোভের আগুন। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নেতৃত্বের বিড়ম্বনাও। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের শুরু থেকেই গণ্ডগোল লেগে রয়েছে গেরুয়া শিবিরে। আদি–নব্য বিজেপি নেতা–কর্মীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা চরমে উঠেছে। আবার পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, রাতারাতি প্রার্থী বদলও করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কোথায় শক্তিশালী সংগঠন? বৃহস্পতিবার বিকেলের পর থেকে এই প্রার্থী তালিকা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করার পর উত্তরবঙ্গের বেশকিছু জায়গায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সাধারণ বিজেপি কর্মীরা।
এই পরিস্থিতিতে দেখা গেল আলিপুরদুয়ার কেন্দ্রের প্রার্থী বদল করে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। আর তাতেই অক্সিজেন পেয়েছেন আদি গেরুয়া শিবিরের নেতা–কর্মীরা। কারণ ওই বিধানসভা কেন্দ্রে টিকিট দেওয়া হয়েছিল ভারত সরকারের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অশোক লাহিড়ীকে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হয় ওই আসনে বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন স্থানীয় নেতা সুমন কাঞ্জিলাল। তাহলে কী হবে অশোকবাবুর? সূত্রের খবর, অশোকবাবুকে সম্ভবত বালুরঘাট আসনের টিকিট দেওয়া হবে। তাই বালুরঘাট আসনের প্রার্থীর নাম এখনও ঘোষণা করেনি বিজেপি।
বিজেপির পরিকল্পনা যদি তারা সরকারে আসতে পারে তাহলে অর্থমন্ত্রী করা হবে অশোকবাবুকে। তাই তাঁকে প্রার্থী করা প্রয়োজন। আবার তাঁর জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেটাকেই কাজে লাগানো যাবে। তবে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে গোলমাল শুরু হতেই। অশোকবাবুকে দলের নীচতলার কর্মী–সমর্থকরা মেনে নিতে পারেননি। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকেলে বিজেপির দিল্লির দফতর থেকে ঘোষণা হয়েছে ১৫৭ প্রার্থীর নাম। তারপর ক্ষণিকের অপেক্ষা। জেলায় জেলায় শুরু হয়ে গেল গেরুয়া শিবিরের বিক্ষুব্ধ কর্মীদের ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ। প্রথমেই আগুন লাগল উত্তরবঙ্গে। জলপাইগুড়ি জেলা সদর ও মালদহ জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরে এদিন সন্ধ্যায় দফায় দফায় ব্যাপক ভাঙচুর চলে বিজেপির পার্টি অফিসে। জলপাইগুড়ির জেলা পার্টি অফিসে আগুনও ধরিয়ে দেন স্থানীয় নেতা–কর্মীরা। অফিসের ভেতরে টেবিল, চেয়ার ভেঙে ফেলা হয়। ছিঁড়ে ফেলা হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, দিলীপ ঘোষের ফ্লেক্সও।
তবে অশোকবাবুকে সম্ভবত রাজ্যের হবু অর্থমন্ত্রী হিসেবেই বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে নিয়ে এসেছিল বিজেপি। কিন্তু ‘বহিরাগত’ অশোক লাহিড়ীকে প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব মেনে নেবে না বলেই আলিপুরদুয়ার থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন দেখার যেখানে তাঁকে প্রার্থী করা হবে, সেখানকার স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের মনোভাব কেমন থাকে। এই পরিস্থিতি গেরুয়া শিবিরের নতুন মাথাব্যাথা এখন অশোক লাহিড়ী।