তৃতীয় দফা ভোটের দিন নিগ্রহের শিকার হতে হয়েছিল উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পাপিয়া অধিকারীকে। সেই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হলেও ঘটনায় জড়িত তৃতীয়জনকে ‘পলাতক’ বলেই জানিয়েছিল পুলিশ। মঙ্গলবার উলুবেড়িয়া হাসপাতাল চত্বরে পাপিয়াকে সপাটে চড় মারতে দেখা গিয়েছে এই তৃতীয় ব্যক্তিকেই। সেই ছবি সোশ্যাল মিডিযায় ছড়িয়ে পড়ে।
তবে এবার সেই পলাতককেই প্রকাশ্যে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। বুধবার দুপুরে উলুবেড়িয়ার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ফতেপুরে বাইকে চড়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে ‘পলাতক’ সুজিত কারককে! জানা গিয়েছে, ফতেপুর এলাকার বাসিন্দা সুজিত পেশায় উলুবেড়িয়া পুরসভার কর্মী। এলাকায় তৃণমূলকর্মী হিসেবেও পরিচিত এই ব্যক্তি। ওই ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর শেখ আকবরের অনুগামীও।
সুজিতের বিষয়ে অবশ্য এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গিয়েছে। কেউ অভিযোগ করেছেন, তিনি ‘দাদাগিরি’ করে বেড়ান। কেউ বা জানান, সব কাজে এগিয়ে আসেন সুজিত। তাঁকে বিপদে-আপদে পাশে পাওয়া যায়। মূল অভিযুক্ত সুজিতকে এলাকায় দেখা গেলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না কেন?
এপ্রসঙ্গে হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশ সুপার শ্রীহরি পাণ্ডের দাবি, ‘মূল অভিযুক্ত-সহ কয়েক জন পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে। শীঘ্রই গ্রেফতার করা হবে।’ গোটা ঘটনা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ওই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পুলক রায়। তিনি শুধু বলেন, ‘পুলিশ এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। তারা কী করবে, তাদের বিষয়। আমি নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত।’
তবে এদিন পাপিয়াকে চড় মারার কথা অস্বীকার করেন সুজিত। তাঁর দাবি, ওইদিন ভোটের সময়ে তাঁদের এক নেতাকে বিজেপি কর্মীরা মারধর করে। তাঁকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। আকবরও সেখানে যান। সেখানে বিজেপি প্রার্থীর উস্কানিতে ওই দলের কর্মীরা আকবরকে কটূক্তি ও মারধর করে বলে সুজিতের অভিযোগ। সুজিতের দাবি, ‘আমরা পাপিয়াদেবীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলাম। পাপিয়াদেবী আমাদের গালিগালাজ করেন। আমি তাঁর মুখ বন্ধ রাখার জন্য হাত দেখিয়ে বলছিলাম। ঠেলাঠেলিতে ওঁর গায়ে হাত লেগে যায়। এটা না—করলেই ভাল হত। আমি অনুতপ্ত।’ সুজিতের স্ত্রী রত্নাও বলেন, ‘মহিলার গায়ে হাত দেওয়াটা ওঁর ঠিক হয়নি। এ জন্য আমিও অনুতপ্ত।’
তৃণমূল নেতাকর্মীদের গালিগালাজ ও মারধরের অভিযোগ মানতে অস্বীকার করেন পাপিয়া। তিনি আগেই স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবার তাঁদের এক কর্মী আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁকে দেখতেই ভোট চলার সময়ই এক ফাঁকে তিনি হাসপাতালে যান। সেখান থেকে বেরনোর সময়ে আক্রান্ত হন তিনি। বুধবার তিনি বলেন, ‘ঘটনার রাত থেকে পেট, পিঠ ও ঘাড়ে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। সারারাত ঘুমোতে পারিনি। হাসপাতালে গিয়েছিলাম। চিকিৎসকেরা বিশ্রাম নিতে বলেছেন।
তৃণমূল নেত্রীর উদ্দেশে কটাক্ষ করে পাপিয়া বলেন, ‘ ওই দলের (তৃণমূল) নেত্রী বড় বড় করে ছবি দিয়ে বলছেন, ‘বাংলা নিজের মেয়েকে চায়’। কিন্তু তাঁর দলের লোকরাই মহিলার গালে চড় মারছে। সম্মানহানি করছে।’ এখানেই থামেননি তিনি। সুজিত ধরা না পড়ায়, পুলিশকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি তিনি। তাঁর অভিযোগ, ‘অভিযুক্তেরা তৃণমূলের নেতা হওয়ায় পুলিশ ভয়ে তাদের গ্রেফতার করছে না। দিনের আলোয় তারা এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। উলুবেড়িয়া থানার আইসি শাসক দলের হয়ে কাজ করছেন।’
ঘটনার দিনই বিজেপির তরফে তৃণমূলের আটজনের বিরুদ্ধে পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তার মধ্যে সুজিতের নামও ছিল। ওই রাতেই পুলিশ জুলফিকার মণ্ডল ও শেখ সাইফুদ্দিন নামে ফতেপুরের দু’জন বাসিন্দাকে গ্রেফতার করে। তারা দু’জনেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত। ধৃতদের বুধবার উলুবেড়িয়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক দু’জনকেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।