একই ছবিতে কাজ করে দেবের মুখোমুখি দাঁড়াবেন তিনি। ট্রেলার থেকে এটুকু বেশ স্পষ্ট যে চরিত্রটা মোটেই সুবিধার নয়, বরং খানিকটা কঠিন। কেমন ছিল কাজের অভিজ্ঞতা, কেনই বা বেছেছিলেন এমন নেগেটিভ শেডের একটা চরিত্র সবটাই ‘প্রধান’ মুক্তির আগে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে শোনালেন এই ছবির অন্যতম ‘প্রধান’ চরিত্র জটিলেশ্বর ওরফে অনির্বাণ চক্রবর্তী।
সবার আগে প্রধান ছবিতে আপনার চরিত্রের বিষয়ে একটু বলুন।
অনির্বাণ: আমার চরিত্রের নাম জটিলেশ্বর, ধর্মপুর মানে যেখানে গোটা ঘটনাটি ঘটছে সেখানকার অঞ্চল প্রধান। জটিলেশ্বরের রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে যা সে পুরোদমে ব্যবহার করে, বলা ভালো মিসইউজ করে। এই চরিত্র ভালো খারাপ যেটাই করে না কেন সেটাই পুরোপুরি বিশ্বাস করে বলেই করে। এরপর যখন দীপক প্রধান (দেবের চরিত্র) বদলি হয়ে ধর্মপুর আসে তখন জটিলেশ্বরের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব বাঁধে। তারপর কী কী হয় সেটা ছবি দেখলেই বোঝা যাবে।
হঠাৎ নেতিবাচক একটা চরিত্র কেন বাছলেন? কোনও বিশেষ কারণ ছিল?
অনির্বাণ: এই চরিত্রটা করার মূলত দুটো কারণ ছিল। এক, আমি কখনও এই ধরনের চরিত্র করিনি। দ্বিতীয়ত এই টিমের সঙ্গে আগে কাজ করিনি। ফলে একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। নতুন ধরনের একটা চরিত্র করার ফলে একটা ভিন্ন স্বাদ পেলাম, সেটা দারুণ উপভোগ করেছি।
আরও পড়ুন: এশিয়ার সেরা ৫০ তারকার তালিকায় ভারতের জয়জয়কার! প্রথম স্থানে শাহরুখ, দ্বিতীয়-তৃতীয় হলেন কারা?
এই ছবিতে চরিত্রের নাম তো জটিলেশ্বর, অনির্বাণ আদতে কেমন সহজ নাকি জটিল?
অনির্বাণ: এই রে, এটা নিজে বলা খুব চাপের। তবে, আমি জীবনকে ভীষণ সহজভাবে দেখতে পছন্দ করি। যেখানে দেখি যে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাচ্ছে ক্রমশ সেটাকে যতটা পারি এড়িয়ে চলি। চেষ্টা করি অন্তত, কিন্তু কতটা পারি জানি না। কোনও জটিলতা নেই এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। তবে আমি যতটা পারি জীবনটা সহজভাবে দেখি।
দেবের সঙ্গে প্রথম কাজ। অভিজ্ঞতা কেমন?
অনির্বাণ: অভিজ্ঞতা তো দারুণ ভালো। ও তো এই ছবির হিরো হওয়ার সঙ্গে অন্যতম প্রযোজক, তাই দুটোকেই খুব ব্যালেন্স করে চলেছে। টলিউডের অন্যতম সুপারস্টার ও, তবুও ভীষণ মাটির মানুষ। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে, আগলে রাখে, সবার সুবিধা-অসুবিধার খেয়াল রাখে। এই ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ১৭ বছর কাটিয়ে ফেলেছে, তবুও অভিনেতা হিসেবে এখনও নিজেকে কী করে আরও ভালো করা যায় সেই চেষ্টাটা ওর মধ্যে আছে যেটা আমার খুব ভালো লেগেছে।
আরও পড়ুন: ছোট পর্দায় ফিরে চমকিত সাহেব, কোন প্রসঙ্গে বললেন, 'হেল অ্যান্ড হেভেন ফারাক'?
আজকাল হামেশাই টলিউড, বলিউড সর্বত্রই দেখা যায় যে হিরো আর ভিলেন এই ভেদটা নেই, হিরোরাও অনেক সময়ে খলনায়ক হয়ে ধরা দিচ্ছেন। আপনি নিজেও একেন বাবুর মতো লিড চরিত্র করার পর নেতিবাচক চরিত্র করলেন এখানে। এই বিষয়ে আপনার কী বক্তব্য?
অনির্বাণ: আমি হিরো নই, আমি অভিনেতা। আর অভিনেতা হিসেবে আমার নানা ধরনের চরিত্র করতে ভালো লাগে। যত আরও এমন বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে কাজের সুযোগ পাবো ততই ভালো। তাছাড়া, আমি তখন ইন্ডাস্ট্রিতে ছিলাম না, তবুও অনুমান করে বলছি, আগেকার দিনে অনেকেই ইমেজ কনসাস ছিলেন। তাঁরা ভাবতেন পজিটিভ চরিত্র করার পর নেগেটিভ চরিত্র করলে বুঝি দর্শকরা নেবে না, ব্যাপারটা ঠিক হবে না। দর্শকরাও এটা ভাবত। কিন্তু এখন দর্শকরা এই বদলটা ভালো ভাবে নেন। তারা আজ অনেক বেশি ম্যাচিওর। দর্শকরা তো রীতিমত এনজয় করে যখন কাউকে পজিটিভ চরিত্রে দেখার পর অন্য ছবিতে নেগেটিভ চরিত্রে দেখে।
ব্যক্তি অনির্বাণ কোন ধরনের চরিত্র করতে বেশি পছন্দ করেন পজিটিভ নাকি নেগেটিভ?
অনির্বাণ: আমি সব ধরনের চরিত্র করতে ভালোবাসি, এক একমাত্রিক চরিত্র হলে একটু কেমন লাগে। আসলে রক্ত মাংসের মানুষ মানেই সে ভালো খারাপ মিশিয়ে, কেউ পুরো ভালো বা কেউ পুরো খারাপ হয় না। তাই এমন চরিত্র করলে মনে হয় আমি একটা মানুষ তৈরি করতে পারছি না। কিন্তু যেখানে সেই সুযোগ থাকে, কাজ করতে করতে সেটা হয়ে যায় তখন সেটা করে ভারী ভালো লাগে।
লালমোহন বাবু নাকি একেন, কোনটা বেশি পছন্দের?
অনির্বাণ: এই রে! এইটা তো জটিল প্রশ্ন হয়ে গেল। তবে আমি উত্তরটা দিতে পারব তাও কারণ সমেত। জটায়ু আমার ভীষণই প্রিয় চরিত্র, খুব কাছেরও। অন্যদিকে একেন বাবু করার আগে পর্যন্ত জানতাম না এমন কোনও চরিত্র আছে। কিন্তু এটা আমি ৯ বার করে ফেলেছি এখনও পর্যন্ত, অন্যদিকে লালমোহন বাবু তিনবার করেছি, মানুষ দুবার দেখেছে। আরেকটা এখনও মুক্তি পায়নি। তাই মানুষ আমায় বেশি একেন বাবু হিসেবেই দেখেছেন, চিনেছেন। এই চরিত্রটা আমি ছাড়া আগে কেউ করেওনি। অন্যদিকে লালমোহন বাবুর চরিত্রে অনেকে অভিনয় করেছে, তবে কাল্ট হিসেবে থেকে গিয়েছে সন্তোষ দত্তের করে যাওয়া কাজটা। আমরা সৌভাগ্যবান যে তাঁর করে যাওয়া চরিত্রে অভিনয় করতে পেরেছি। তাই ওটা যখন ৯-৯ হবে, বা অন্তত ৮-৯ তখন উত্তরটা দিতে পারব। এখন একেন বাবুর প্রতিই আমি একটু বায়াসড।
দর্শকদের কাছে একেন বাবু মানেই অনির্বাণ চক্রবর্তী। বিষয়টা কেমন এনজয় করেন?
অনির্বাণ: খালি উল্টো না হলেই ভালো। (হাসি) একটা সময় এটা হয়েছিল, আমি অন্য চরিত্র করা সত্বেও লোকজন আমায় একেন বাবু বলেই ডাকত, চিনত। খারাপ লাগত না, কিন্তু অস্বস্তি হতো। মনে হতো এই চরিত্রের কাছে অন্য চরিত্রগুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে না তো? কিন্তু পরে বুঝেছি দর্শকদের অন্য চরিত্র ভালো লাগছে, প্রসংশা করছে সেগুলোর। কিন্তু আমায় তবুও তারা একেন বাবু বলে ডাকে ভালোবেসে।
প্রধানের সেটে কোনও মজার ঘটনা ঘটেছে?
অনির্বাণ: আজকাল যেখানে অধিকাংশ বাংলা ছবির শুটিং ১৯ দিনের কমে শেষ হয়ে যায় সেখানে আমরা ১৯ দিন একটা আউটডোর শুটিং করেছি। উত্তরবঙ্গের একটা গোটা রিসোর্ট নিয়ে আমরা থেকেছি। দেব তো নিজেই ভীষণ মজা করে, এছাড়া পরাণ দা, বিশ্বনাথ, সহ সবাই খুব মজা করেছে। কাজের পাশাপাশি একটা পিকনিকের আবহ তৈরি হয়ে গিয়েছিল, খাওয়া, গান, আড্ডা সব হতো।