বাঙালি আর ফুটবল—এই দুটো মিলেমিশে আছে। ইদের মরসুমে রুপোলি পর্দায় ফুটবলের স্বর্ণযুগকে ফিরিয়ে আনলেন পরিচালক অমিত শর্মা। ফুটবল কোচ চ সৈয়দ আব্দুল রহিমের জীবনী ‘ময়দান’। কেন্দ্রে রয়েছেন অজয় দেবগণ। এই ছবিতে দেখা মিলেছে একঝাঁক বাঙালি অভিনেতার, যার অন্যতম টলিপাড়ার ‘সন্তু’ আরিয়ান ভৌমিক। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে একান্ত আড্ডায় ধরা দিলেন অভিনেতা। আরও পড়ুন-‘চুনী গোস্বামীর স্ত্রীর চোখে জল, ডেকে বললেন ছবিটা দেখলে উনি খুব খুশি হতেন’, ময়দান প্রসঙ্গে অমর্ত্য
আর মাত্র কয়েকঘন্টা পরেই ময়দান মুক্তি পাচ্ছে। জার্নিটা নিয়ে কী বলবেন?
আরিয়ানঃ খুব উত্তেজিত। একের পর এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলাম। প্রায় পাঁচ বছরের একটা খাটুনি। অতিমারী, দু-বার সেট ধ্বংস হওয়া- অনেক কিছু ঘটে গেছে। এবার দর্শকদের দরবারে আমাদের ছবি, এর চেয়ে বেশি এক্সাইটমেন্ট আর কী হতে পারে! নিজের জন্য ব্যক্তিগতভাবে বলব, ময়দানের মতো একটা ম্যাগনাম ওপাসের অংশ আমি, তার চেয়েও বড় ব্যাপার ছবিতে আমি নেভিল ডিসুজার চরিত্রে অভিনয় করছি।
নেভিল ডিসুজা প্রথম ভারতীয় ফুটবলার যিনি আন্তর্জাতিক স্তরে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। সেইরকম একজন লেজেন্ডের চরিত্রে অভিনয়টা আমার কাছে বিরাট বড় প্রাপ্তি। ছবিতে আমাকে স্পেশ্যাল অ্যাপিয়ারেন্সে দেখা যাবে।
ময়দানের প্রস্তুতি পর্ব কেমন ছিল?
আরিয়ানঃ ২০১৯ সাল থেকে অডিশন শুরু হয়েছিল। প্রচুর প্র্যাক্টিস করতে হয়েছে। আমি সেই সময় সিরিয়াল করছিলাম, তার ফাঁকেও প্র্যাক্টিসের ভিডিয়ো মুম্বইয়ে পাঠাতো। আমি শখে ফুটবল খেলেছি, তবে পেশাদার নই। ওখানে গিয়ে দেখলাম বেশিরভাগই কখনও না কখনও পেশাদার স্তরে খেলেছে। ময়দানে যেভাবে ম্যাচগুলো দেখানো হয়েছে সেটা কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরের।
মেসির (রিঙ্গো বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি) সময় আমার যে প্রস্তুতিটা ছিল সেটা কাজে লেগেছে। ওই সময় তো সকলে গাম-বুটের মতো একধরণের জুতো ছিল, সঙ্গে লেদারের বলটাও খুব ভারি। সেইগুলোর সঙ্গে মানিয়ে দেওয়াটা চ্যালেঞ্জিং ছিল।
অজয় দেবগণের সঙ্গে স্ক্রিনস্পেস শেয়ার করলেন। কী শিখলেন?
আরিয়ানঃ আমার প্রথম শটটাই ছিল অজয় দেবগণের সঙ্গে। দারুণ অভিজ্ঞতা। এত ঠাণ্ডা মাথার অভিনেতা উনি। এখনও মনে আছে একটা শটের পর উনি আমাকে এসে বললেন, ‘ সরি, আরেকটা টেক দিতে চাই’। আমি তো হেসেই ফেলেছিলাম। ওঁনার মতো এত অভিজ্ঞ, এত বড় একজন সুপারস্টার আরেকবার শট দিতে চাইছেন, আর সে জন্য আমাকে সরি বলছেন- এটা সত্যি অভাবনীয়। এত বছর পরেও নিজের কাজটা খুব সিরিয়াসলি নেন। ব্যক্তিগত স্তরে খুব স্বল্পবাক, মিতবাক একজন মানুষ। ওঁনার মধ্যে যে কম্পোজারটা রয়েছে, সেটা শেখার মতো।
নতুন প্রজন্মকে এই ছবি ভারতীয় ফুটবলের সোনালি ইতিহাস জানতে কতটা সাহায্য করবে?
আরিয়ানঃ এই বিষয়টা নিয়ে আগে কখনও সিনেমা হয়নি। খুব বেশি লেখালেখিও হয়নি। কোচ রহিমকে নিয়ে এই ছবিটা হওয়ার খুব দরকার ছিল। ধন্যবাদ বনি কাপুর, অমিত শর্মা স্য়ার এবং অজয় স্যারকে এই বিষয়টা আজকের প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার জন্য।
ময়দানের অংশ হওয়ার আগে আপনি নেভিল ডিসুজা সম্পর্কে কতটা জানতেন?
আরিয়ানঃ আমি খুব বেশি জানতাম এটা বলাটা ভুল হবে। বলরাম-চুনী-পিকে এই ত্রয়ীর আগে একজন নেভিল ডিসুজা বলে ছিলেন, যিনি স্ট্রাইকার হিসাবে খেলতেন। তবে যখন আমি তাঁর চরিত্রটা ফুটিয়ে তোলার সুযোগ পেলাম, তখন জানতে পারলাম উনি কত বড়মাপের একজন ফুটবলার ছিলেন।
দীর্ঘ সময় পর বলিউডে ফিরলেন….
আরিয়ানঃ এটা বলিউডে যে কোনও প্রোজেক্ট নয়, এত বড় স্কেলে ছবি বলিউডেও রোজ হয় না। এই বছরের সবচেয়ে বড় ছবি ময়দান। সেই অভিজ্ঞতাটা একদম আলাদা। এর আগে আমি বলিউডে ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সীতে কাজ করেছিলাম। তারপর প্রায় ১০ বছর কেটেছে, খুব ভালো অভিজ্ঞতা। এইরকম প্রোজেক্টে কাজ করা মানে একটা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অভিনয়টা শেখার মতো।
আগামিতে আরিয়ানের কোন কোন প্রোজেক্ট আসছে?
আরিয়ানঃ আমি সম্প্রতি টেক্কাতে কাজ করলাম সৃজিতদার (মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে, দারুণ অভিজ্ঞতা। এই ছবিতে আমাকে একদম অন্যরকম একটা চরিত্রে দেখবে। আমি বলিউডে অভিনয় দেও-র ‘ব্রাউন’-এ করিশ্মা কাপুরের সঙ্গে কাজ করলাম। সেটাও খুব দারুণ একটা অভিজ্ঞতা।
‘তিতলি’ শেষ হওয়ার পর আপনাকে আর টিভিতে দেখা গেল না। কামব্যাকের ইচ্ছে রয়েছে?
আরিয়ানঃ টিভি আমাকে বিরাট পরিচিত দিয়েছে। ‘তিতলি’ নিয়ে এখনও ফিডব্যাক পাই। আমার অভিনেতা হিসাবে কোনও ছুৎমার্গ নেই, কাজটা আমার কাছে কাজ। চরিত্র যদি লোভনীয় হয় তাহলে আমার কাজ করতে কোনও আপত্তি নেই। ব্যক্তিভাবে আমার বিশ্বাস একজন অভিনেতা যত ভিন্ন মাধ্যমে কাজ করবে, তার রেঞ্জ অফ স্পেকট্রামটা বাড়বে।
আপনার বিশেষ বন্ধু নন্দিনীর (দত্ত) কী প্রতিক্রিয়া ময়দান নিয়ে?
আরিয়ানঃ নন্দিনী ভীষণ এক্সাইটেড। ও আমার পুরো জার্নিটাই দেখেছে। আমার অডিশন টেপ থেকে প্র্য়াক্টিস, সবেতেই ও সাহায্য করেছে। প্রথমদিন থেকে আমার এই জার্নিটার সাক্ষী ও। অনেক ভিডিয়ো তুলেও দিয়ে ও সাহায্য করেছে। শুধু নন্দিনী নয়, আমার বাবা-মা, বন্ধুরা সবাই ময়দান নিয়ে খুব এক্সাইটেড।