ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বট গাছ বলা হয় যাঁকে সেই পণ্ডিত বিজয় কিচলু ৯৩ বছর বয়সে সুরলোকের চলে গেলেন। শুক্রবার আচমকাই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় তাঁর। আগামী প্রজন্মকে শাস্ত্রী সঙ্গীতের সঠিক পথে চালনা করার যে বটবৃক্ষের ছায়া ছিল সেটা যেন আচমকাই তাঁর প্রয়াণে সরে গেল।
আইটিসি সঙ্গীত রিসার্চ আকাদেমির প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি। এই প্রতিষ্ঠানকে তিনি গুরুকুলের ভাবনায় গড়ে তুলেছিলেন। পদ্মশ্রী এবং আকাদেমি রত্ন সদস্যত পুরস্কার পেয়েছিলেন বিজয় কিচলু।
১৯৩০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এক কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারে জন্ম হয় তাঁর। এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ইতিহাসে মাস্টার্স করেন। এরপর তিনি কলকাতা চলে আসেন এবং টার্নার মরিসন এবং কোম্পানিতে কাজ পান তিনি।
পরবর্তী কালে তিনি ব্ল্যাকার অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের ডিরেক্টর হন। এখানেই প্রথম জীবনে ফ্রাইট ব্রোকার হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। যদিও পণ্ডিত কিচলুর কর্মজীবনের সঙ্গে গানের দূরদূরান্ত পর্যন্ত কোনও সম্পর্ক ছিল না, তবুও শত ব্যস্ততাতেও তাঁর সঙ্গে সঙ্গীতের কখনও বিচ্ছেদ হয়নি। গানটা তাঁর সঙ্গে আজীবন থেকেই গিয়েছে। পণ্ডিত নাথুরাম শর্মার থেকে সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেছিলেন বিজয় কিচলু। পরবর্তীকালে তিনি উস্তাদ আমিনুদ্দিন দাগরের থেকেও সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন। এরপর তিনি উস্তাদ লতাফাত হুসেনকে এক প্রকার বাধ্য করেন তাঁর গানের স্কুল মুম্বই থেকে কলকাতায় আনতে যাতে তিনি তাঁর থেকে গান শিখতে পারেন। গানের প্রতি তাঁর এতটাই টান, ভালোবাসা ছিল।
তবে কেবল গান নয়, তিনি নাকি দারুণ ব্যাডমিন্টন খেলতেন। জাতীয় স্তরেও তিনি ব্যাডমিন্টন খেলেছেন বলে জানান বিদুষী শুভ্র গুহ। তিনি বিজয় কিচলুর ছাত্রী।
সঙ্গীত শ্রেষ্ঠ কিচলুর আত্মজীবনী লেখক মীনা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিষয়ে জানান, 'সঙ্গীত আশ্রমের অন্যতম প্রাণ পুরুষ চিকেন তিনি। তাঁর হাত ধরেই হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ব্যাপ্তি লাভ করেছিল।' পণ্ডিত তেজেন্দ্র নারায়ণ মজুমদার তাঁর বিষয়ে বলেন, ' উনি আমার বন্ধু, ফিলোসফার, গাইড ছিলেন। নতুন প্রজন্মের কাছে হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পৌঁছে দিতে ওঁর অবদান অনস্বীকার্য।'
১৯৯৭ সালে যখন তাঁর স্ত্রী চলে যান তখন তাঁর কাছে অন্য শহরে থাকার বহু সুযোগ এসেছিল। কিন্তু তিনি সেগুলো গ্রহণ করেননি। কাশ্মীরি পণ্ডিত পরিবারে জন্ম হলেও তিনি কলকাতাকে ভালোবেসেছিলেন। তিনি এই কলকাতাতেই শেষ জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন। একবার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ' আমি এই শহরটাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমি এখানেই বাঁচতে চাই, এখানেই মরতে চাই।' শেষ জীবনে তিনি তাই তাঁর পুত্র এবং বৌমার সঙ্গেই কলকাতাতে থাকতেন।