অনেক সময়ই অনেক রিপোর্টে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর অন্যান্য উন্নতিশীল দেশের তুলনায় ভারতে অনেক কম ডিভোর্স দেখা যায়। কিন্তু কেন কখনও ভেবে দেখেছেন? বিশেষজ্ঞদের মতে আজও ভারতের বহু মহিলার অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নেই। তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব নিতে পারেন না বলেই সমস্ত অত্যাচার সহ্য করে। কোনও মতে টিকিয়ে রাখেন এই খারাপ সম্পর্ক। পূজা বেদি একটি খারাপ সম্পর্কে ছিলেন না ছিলেন না সেটা তর্কের বিষয়। তবে তিনি যখন তাঁর স্বামীর থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তখন কিন্তু তাঁর মোটেই এখনকার মতো স্বচ্ছল অবস্থা ছিল না। অর্থনৈতিক ভাবে তিনি এতটা স্বাবলম্বী ছিলেন না। তবু সাহসে ভর করেই বাড়ির বাইরে পা রাখেন।
১৯৯৪ সালে ফারহান ফার্নিচারওয়ালাকে বিয়ে করেন পূজা। এরপর ২০০৩ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। কোনও রকম খোরপোশ না নিয়েই তিনি এই সম্পর্কে ইতি টানেন। তিনি এটুকু নিজের উপর বিশ্বাস এবং ভরসা রেখেছিলেন যে আগামীতে তিনি তাঁর জীবন এবং কেরিয়ার দুই আবার বানিয়ে নিতে পারবেন। সেই আত্মবিশ্বাসটুকু তাঁর ছিল।
অতীতের কথা মনে করে পূজা বলেন তিনি এটুকু নিশ্চিত ছিলেন যে তিনি ওই বিয়েটা আর টিকিয়ে রাখতে চান না, কিন্তু একই সঙ্গে সেক্ষেত্রে নানা সমস্যাও ছিল। তাঁর স্বামীর মতে তিনি একেবারে আদর্শ স্ত্রী ছিলেন। তিনি কিন্তু মোটেই পূজা বেদির হাত ছাড়তে চাননি। তাঁকে ডিভোর্স দিতে চাননি। ফারহান ভেবেছিলেন তিনি পূজাকে টাকা দিলেই বোধহয় তিনি তাঁকে ছেড়ে চলে যাবেন। তিনি সেটা কোনও শর্তেই করতে চাননি তাই।
২০ বছর আগে কোর্টের নিয়ম কানুন অনেক আলাদা ছিল। মহিলাদের জন্য নিয়ম থাকলেও সেটা কঠোর ভাবে যে পালন করা হতো এমনটা ছিল না। ফলে তখন একপ্রকার এই বিয়ে থেকে বেরোনোর জন্যই পূজা কোনও টাকা না নিয়েই স্বামীর ঘর ছেড়েছিলেন। একই সঙ্গে ভেবেছিলেন এই কোর্ট কাছারির চক্কর তাঁর সন্তানদের উপর কুপ্রভাব ফেলবে। তাই তিনি এমনই সরে গিয়েছিলেন। এবং ঠিক করেছিলেন সন্তানদের জন্যই তিনি তাঁর প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন।
পূজা আরও জানান তিনি যে কেবল নিজের কেরিয়ার ছেড়েছিলেন ফারহানের জন্য সেটাই নয়। একই সঙ্গে তাঁর কেরিয়ার গুছিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে ফার্নিচারওয়ালা শুরু করেছিলেন। বিজনেস স্ট্র্যাটেজি থেকে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে দেখা করা সব করতেন। তবুও তাঁর স্বামী তাঁকে স্পষ্টই বলে দিয়েছিল এই ব্যবসা তাঁর নয়। তাঁকে ভয় পর্যন্ত দেখিয়েছিলেন। পূজা যতই তাঁকে বোঝান না কেন যে অনেক অভিনেত্রীই ব্যবসা করেছেন অভিনয়ের পাশাপাশি, সফল হয়েছেন তিনি নাকি মানেননি।
পূজা যখন দেখেন কিছু করেই কিছু হচ্ছে না তখন তিনি নিজের চেষ্টায় আবার সবটা প্রথম থেকে শুরু করে জন্য প্রস্তুত হন। তাঁর নিজে উপর বিশ্বাস ছিল। তিনি জানতেন একবার যখন ১৮ বছর বয়সে প্রায় কিছু না নিয়েই এত কিছু করতে পেরেছেন আবারও পারবেন। সেই থেকে কলম বেছে নেন পূজা। শুরু করেন লিখতে। ১৬,০০০ টাকার বিনিময়ে ম্যাগাজিনে লিখতেন তখন তিনি। এরপর সেখান থেকেই তাঁর কাছে একটি টক শো সঞ্চালনা করার অফার আসে। আর ব্যাস, সেটাই তাঁর জীবনের আরও একটি টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। মাত্র ১৮ মাসে ফের তাঁর জীবন ঘুরে যায়। তাঁর প্রাক্তন যে মার্সিডিজ চড়তেন সেই একই গাড়ি কেনেন তিনি। ঘুরে দাঁড়ান। উল্টে বেশ কিছু বছর পর তাঁর প্রাক্তন তাঁকে ফোন করে অনুরোধ করেন তিনি তাঁর ব্যবসায় কিছু সাহায্য করতে পারবেন কিনা।