সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর তদন্তের দায়িত্বে থাকা মুম্বই পুলিশের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নয় সুশান্ত ভক্তরা। শুরুতেই মুম্বই পুলিশ এই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে দাবি করায় ক্ষুদ্ধ তাঁরা। এই হাই প্রোফাইল মৃত্যুর তদন্তভার দেওয়া হোক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বা সিবিআইকে। দিল্লির আইনজীবী ইশকরণ সিং ভান্ডারিও শুরু থেকেই সুশান্তের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের দাবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় আন্দোলন শুরু করেছেন। কেন এই কেসের তদন্তভার যাওয়া উচিত সিবিআইয়ের হাতে, সেই নিয়ে ফের একবার জোর সওয়াল করলেন এই আইনজীবী।
তাঁর কথায়, এই মৃত্যুটাকে ‘রহস্যমৃত্যর মামলা’ বলেই পুলিশের বিবেচনা করা উচিত ছিল ‘আত্মহত্যা’ নয়,কারণ সম্পূর্ন তদন্ত এখন শেষ হয়নি। গত ১৪ জুন মুম্বইয়ের বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার করা হয় সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ। সুশান্তের মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন, সুশান্তের গার্লফ্রেন্ড রিয়া চক্রবর্তী। এছাড়াও, শেখর সুমন, বিজেপি সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ও সুব্রহ্মমণ্যম স্বামীও সিবিআই তদন্তের লাগাতার দাবি জানাচ্ছেন।
যদিও সিবিআই তদন্তের এই দাবি খারিজ করে দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ। তাঁর কথায় মুম্বই পুলিশ খুব পেশাদারভাবে গোটা মামলার তদন্ত করছে। 'কীভাবে সুশান্তের মৃত্যুর কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুলিশ নিশ্চিত হয়ে গেল এটি আত্মহত্যার ঘটনা? এবং সেই কারণেই সংবাদমাধ্যমেও এই মামলা প্রচারিত হল আত্মহত্যার ঘটনা হিসাবে',প্রশ্ন আইনজীবীর।
তদন্তের সাধারণ প্রক্রিয়া বলে এটা একটা অস্বাভাবিক মৃত্যু এবং তারউপর ভিত্তি করে শুরু হয় তদন্ত। তারপর কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় সেটা আত্মহত্যা নাকি খুন', হিন্দুস্তান টাইমসেক জানান ইশকরণ সিং ভান্ডারি। এই মামলা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে,যার উত্তর খোঁজা জরুরি বলে মনে করেণ এই আইনজীবী। তাঁর দাবি, অনেক ফাঁক রয়েছে পুলিশের তরফে। সুশান্ত ৫০টি সিম কার্ড পাল্টেছেন বলে শোনা যায়। ইশকরণ এই নিয়ে বিস্তারিত চিঠিও লেখেন মুম্বই পুলিশকে। তিনি বলেন, আমি চিঠিতে সেই সোর্সের নাম উল্লেখ করে বলি, সেই ৫০ টি সিম কার্ড এবং সমস্ত ইলেকট্রনিক অ্যাভিডেন্স কী সংগ্রহ করা হয়েছে এই কেসের সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তিদের? সেটা কোনও তদন্তের বেসিক প্রয়োজনীয়তা'।
তিনি আরও বলেন, 'আমি প্রশ্ন করেছি সুশান্তের ফ্ল্যাট সিল করা হয়েছে কিনা এবং মেনস্ট্রিম মিডিয়ার রিপোর্ট বলছে সুশান্তের বাড়ির ফরেনসিক পরীক্ষা হয়েছে ঘটনার একদিন পর' (১৫ জুন)। এই হাই প্রোফাইল মামলায় এই ঢিলেমি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবী। চব্বিশ ঘন্টায় অনেক এভিডেন্স পাল্টে যেতে পারে, বলেন তিনি। মানুষের বিশ্বাস বজায় রাখবার জন্য এইগুলো খুব জরুরি।
একাধিক মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে সুশান্তের মৃত্যুর পর সিল হয়নি তাঁর ফ্ল্যাট,বরং সুশান্তের বেশ কিছু বন্ধুকে ঘটনার পরেও নিয়মিত যাতায়াত করতে দেখা গিয়েছে ওই ফ্ল্যাটে। ইশকরণ সিং ভান্ডারি যোগ করেন, ‘এই মামলায় যেসব ব্যক্তিদের নাম জড়িয়েছে তাঁরা সকলেই প্রভাবশালী, তাঁদের সকলের ভালো সোর্স রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে, তাঁরা প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত-এইরকম ক্ষেত্রে মামলায় স্বচ্ছতা বজায় রাখতে অবিলম্বে এই কেস সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া উচিত’। মহারাষ্ট্র সরকার তা না করলে আদালতের দরজায় কড়া নাড়া ছাড়া উপায় নেই কারণ মানুষ বিচার চায়, অন্তত তাঁদের মনে সেই সন্তুষ্টি থাকা প্রয়োজন যে তদন্তটা স্বচ্ছ ভাবে করা হয়েছে'।