কলকাতায় এসে গেল চাইনিজ নিউমোনিয়া। শহরে মিলল এই রোগের পিছনে থাকা ‘মাইকোপ্লাজমা নিউমোনি’ ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণের অস্তিত্ব। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১০ বছরের এক বালিকা। আর এতেই কিছুটা উদ্বেগ ছড়িয়েছে নানা মহলে।
গত নভেম্বরে চিনে অজানা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে অসংখ্য শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। বেশ কয়েক জনের মৃত্যুও হয়। বিষয়টি চিনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, আমেরিকাতেও ওই নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল। বহু শিশু, কিশোর-কিশোরীরা তাতে আক্রান্ত হয়। প্রথম দিকে এটিকে বিশেষ ধরনের নিউমোনিয়া বা অজানা নিউমোনিয়া বলা হচ্ছিল। তার পরে এটিকে হোয়াইট লাং সিনড্রোমও বলা হয়। পরে বিজ্ঞানীরা জানতে পারেন এর পিছনে থাকা ব্যাকটিরিয়াটির ভূমিকার কথা।
কলকাতায় আক্রান্ত বালিকা বর্তমানে পার্ক সার্কাসের এক শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল বলেই দাবি চিকিৎসকদের। তবে এটি সত্যিই চাইনিজ নিউমোনিয়া কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে চিকিৎসক মহলে। চিকিৎসক জয়দেব রায় আনন্দবাজার পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ওই ব্যাকটিরিয়া নতুন নয়। সমস্ত রোগীর রেসপিরেটরি প্যানেল পরীক্ষা করা সম্ভব হয় না বলে হয়তো সহজে এর অস্তিত্ব জানা যায় না। তাঁর বক্তব্য, এটি চাইনিজ নিউমোনিয়া কি না, তা বুঝতে একটু সময় লাগবে।
গত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দিল্লি এমস্ নিউমোনিয়া আক্রান্ত প্রায় ৬০০ শিশুর উপরে একটি সমীক্ষা চালায়। তাতে সাত জনের শরীরে এই বিশেষ জীবাণুটি অর্থাৎ মাইকোপ্লাজমা নিউমোনি ব্যাকটিরিয়ার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল।
এই রোগের উপসর্গগুলি কী কী? কলকাতার আক্রান্ত বালিকার তীব্র জ্বর, সর্দি-কাশি ছিল। শ্বাসকষ্টর কারণেই তাকে ২৫ ডিসেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বালিকার চিকিৎসক সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে, সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। কী কারণে ফুসফুসের অনেকটা অংশ জুড়ে নিউমোনিয়া ছড়িয়েছে, তা জানতে রেসপিরেটরি প্যানেল পরীক্ষা করা হয়। তখন দেখা যায়, ওই বালিকা মাইকোপ্লাজমা নিউমোনি ব্যাক্টিরিয়ায় আক্রান্ত।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রথমে ওই বালিকাকে অক্সিজেন দেওয়া হলেও এখন খুলে দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করেছে বালিকার শরীরে। সুতরাং ওই ব্যাকটিরিয়ায় আক্রান্ত হলেই চিন বা আমেরিকার মতো অবস্থা হবে, এমন ভাবার কোনও কারণ নেই। বরং সতর্ক থাকতে হবে। তাহলেই এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।
আপাতত এটি নিয়ে আলোচনা চলছে, কলকাতার ‘মাইকোপ্লাজমা নিউমোনি’ই কি চাইনিজ নিউমোনিয়ার পিছনে থাকা ব্যাকটিরিয়াটি— তা নিয়ে। বিষয়টি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত সচেতন থাকতে বলছেন চিকিৎসকরা।