ফাল্গুনী বসু(নাম পরিবর্তিত)। বয়স ৫৫। হাওড়ার শিবপুরের এই বাসিন্দা বেশ কিছুদিন ধরেই কাশির সমস্যায় ভুগছিলেন। ঠান্ডা লেগেছে বলেই হয় তো এমনটা হচ্ছে, ভেবে বিশেষ পাত্তা দেননি। গরম জলে গার্গেল, মধু-চবনপ্রাশ খেয়েই সারিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন। তাতে কাজ না হওয়ায় বাজার চলতি ওষুধও কিনে খান। কিন্তু সময়ের সঙ্গে কাশি বাড়তেই থাকে। পরে চিকিত্সক দেখাতে জানা যায়, অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে তাঁর এই সমস্যা। আর তার থেকেই এই 'ক্রনিক' কাশি। সেই চিকিত্সা শুরু হতেই তাঁর কাশি থেমে যায়।
ক্রমাগত কাশি হয়েই চলেছে। একদিন-দুই দিন নয়। সবসময়েই যেন এমনই অবস্থা। রোজই কাশির জন্য কষ্ট পাচ্ছেন? তা-ই যদি হয়, তবে দেরি করবেন না। অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। কারণ, বর্তমানে এমন দীর্ঘস্থায়ী কাশির সমস্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর পিছনে নানা কারণ রয়েছে। যেমন কোভিড, দূষণ, হাঁপানি ইত্যাদি। তাছাড়া নিয়মিত ধূমপানের মতো বিষয় তো রয়েছেই। আবার অনেকক্ষেত্রে এক টানা বাড়াবাড়ি রকমের কাশি হলে, তার থেকে যক্ষ্মার লক্ষণ ধরা পড়ে। ফলে বিষয়টি নিয়ে হেলাফেলা করা ঠিক হবে না। আরও পড়ুন: এক্সারসাইজের সময়ে কাদের প্রাণসংশয় আছে? কারা খুব সাবধানে থাকবেন?
প্রথমেই আমাদের জানতে হবে, কাশি কেন হয়?
কাশি আসলে শ্বাসনালি সাফ-সুতরো রাখার একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া। অর্থাত্, আপনার শ্বাসনালিতে কিছু আটকে থাকলে তা সাফ করতে শরীর এই কাজটি করে। কিন্তু যদি সেই কাশিই দিনের পর দিন একটানা চলতে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার সাবধান হওয়া প্রয়োজন। চিকিত্সকরা বলছেন, কাশি ৮ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলতে থাকলে, সেটি দীর্ঘস্থায়ী কাশি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এমন দীর্ঘস্থায়ী কাশি যে শুধুমাত্র বিরক্তিকর এবং কষ্টকর, তাই নয়। এর থেকে অন্য নানা উপসর্গ যেমন বমি, ঘন ঘন কাশির কারণে ঘুম আসতে সমস্যা, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, মূত্রাশয়ের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা এবং এমনকি পাঁজরের ফাটলও হতে পারে।
পালমোনোলজিস্ট ডঃ পুজন পারিখ এই বিষয়টি ব্যাখা করলেন। তিনি জানালেন, 'দীর্ঘস্থায়ী কাশির একাধিক কারণ থাকতে পারে। সঠিক কারণ নির্ণয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ফুসফুসের ক্যান্সার, ফুসফুসের ফাইব্রোসিসের মতো বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগেরও লক্ষণ হতে পারে।' ফলে বুঝতেই পারছেন, বিষয়টি হেলাফেলা করার মতো নয়।
ভারতে এই 'ক্রনিক কাশি'র সবচেয়ে কমন কারণগুলি কী কী?
১. ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা : ছোট থেকে হাঁপানির সমস্যা হয়নি। তাই হয় তো কাশির কারণ ঠিক বুঝতে পারছেন না। কিন্তু এমনটাও হতে পারে যে আপনার অ্যাজমা ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসছে। আর সেই কারণেই কাশতে কাশতে হাঁপিয়ে যাচ্ছেন। এমনটা মনে হলে কিন্তু অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। ডঃ পারিখ জানালেন, 'অল্প বয়সে অনেকক্ষেত্রেই এই সমস্যাটি হচ্ছে। তাছাড়াও ধোঁয়া, দূষণ, ধূমপান, ধুলো, চড়া সুগন্ধী থেকেও অনেকের এই সমস্যা শুরু হয়।'
২. কোভিড বা ভাইরাল সংক্রমণ : কোভিড বা ভাইরাল সংক্রমণের পরে, শ্বাসনালি অ্যালার্জেনের প্রতি অতি-সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে। এর থেকে দীর্ঘস্থায়ী কাশির মতো সমস্যা হতে পারে।
৩. যক্ষ্মা : যক্ষ্মা পরবর্তী ব্রঙ্কাইক্টেসিস থেকে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে। ভারতে যে কোনও ব্যক্তি দীর্ঘস্থায়ী কাশির কথা জানালেই যক্ষ্মা রোগের অন্য উপসর্গ খোঁজা হয়।
৪. ক্যান্সার, COPD : বয়স্কদের ফুসফুসের ক্যান্সার, ফুসফুসের ফাইব্রোসিস, ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD), হার্ট ফেইলিয়র, ACE ইনহিবিটারের মতো কিছু ওষুধের কারণে দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে, জানালেন ডঃ পারিখ। আরও পড়ুন: নিয়মিত দূষণের প্রভাবে দেখা দিতে পারে মানসিক সমস্যা, দাবি বিশেষজ্ঞদের সমীক্ষায়
৫. অন্যান্য কারণ : গ্যাস্ট্রো এসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ, ফরেন বডি অ্যাসপিরেশন, পোস্ট নাসাল ড্রিপের কারণেও দীর্ঘস্থায়ী কাশি হতে পারে।