অল্প বয়সে অনেকেই অনেক রকমের ভুল করে ফেলেন। সেই সব ভুলের দাম দিতে হয় সারা জীবন। আমার ক্ষেত্রেও কি বিষয়টি তাই? আমি জানি না। তাই পরামর্শ চাইছি।
এমন একটি রাতের কথা লিখতে বসেছি, যে রাতের কথা আমি ভুলতে পারিনি। আর সেটিই আমার জীবন পুরো বদলে দিয়েছে।
আমার বয়স এখন ৩৫ বছর। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে আমি। এটি বছর ১২ আগের কথা। তার মাস আটেক আগে আমার সঙ্গে আলাপ হয়ে একটি ছেলের। এখানে তার নাম লিখছি না। কর্মসূত্রেই আলাপ হয়। নিয়মিত দেখা হত। কয়েক দিন যেতেই বুঝতে পারি, আমার ওকে ভালো লাগে। সেই লাগার মধ্যে পুরোদস্তুর প্রেম রয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই আমায় কম প্রেম নিবেদনের মুখে পড়তে হয়নি। কিন্তু কখনও কারও সঙ্গেই প্রেম করে উঠতে পারিনি। পড়াশোনার চাপে বই থেকে মুখ তোলার সময় পেতাম না। প্রেম তো অনেক দূরের কথা। তবু প্রেম এসে হাজির হয়েই যেত। আমিও সে সব হাসিমুখে উপেক্ষা করে যেতাম। হয়তো বছর ১২ আগের সেই সময়টার জন্যই।
যাই হোক, বছর ১২ আগের তার সঙ্গে আলাপ হয়। মাসখানেক যেতে যেতেই সেটি প্রেমের স্রোতে বইতে থাকে। ওর সঙ্গে আমার একটা মিল ছিল। আমরা দু’জনেই খুব লাজুক। আর দু’জনেরই এর আগে কোনও প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। দু’জনে বেশ মাখোমাখো প্রেমে মেতে যাই।
এভাবেই এগোতে থাকে বেশ কয়েক মাস। কখনও হাতে হাত রেখে, কখনও ঠোঁটে ঠোঁট রেখে ভালোবাসা হত। কিন্তু সেই ভালোবাসা তার থেকে বেশি শারীরিক হওয়ার সুযোগ পায়নি। যদিও ও চাইত আরও ঘনিষ্ট হতে। কিন্তু সুযোগ পাওয়া যেত না।
তেমন সুযোগই একবার এসে গেল। সুযোগ দিল আমার এক বান্ধবী। ওদের ছিল দুটো ফ্ল্যাট একটায় ওর বাবা-মা থাকতেন। আর একটা বান্ধবী একা। কোনও এক কারণে (এখন আর মনে নেই) একটি রাতে বান্ধবী ওর বাবা-মায়ের ফ্ল্যাটে রাতে থাকতে গেল। আমরা সেই সুযোগে শারীরিকভাবে ঘনিষ্ট হতে গেলাম।
সন্ধ্যায় ওর বাইকে করে পৌঁছোলাম বান্ধবীর ফ্ল্যাটে। আমরা পৌঁছোতে বান্ধবী সব কিছু গুছিয়ে রেখে অন্য ফ্ল্যাটে রওনা দিল।
এই রাতের অপেক্ষায় কেটেছে বহু মাস। একটু কাছে আসা। আরও একটু ভালোবাসা। আরও আরও বেশি কিছু চাওয়া। তার কোনওটাই অপূর্ণ থাকেনি।
পরদিন সকালে বান্ধবী হাজির। আমরা ঠিক করলাম, এক সঙ্গে রওনা হব না। আমি আমার বান্ধবীর সঙ্গে থেকে গেলাম ফ্ল্যাটে। ও একাই রওনা দিল।
এখন আর মনে নেই, কয়েক ঘণ্টা পরে হয়তো, ফোনটা বেজে উঠল। তাকিয়ে দেখলাম অফিসের একজন। তখনও আমি এবং আমার বান্ধবী বিছানায় বসেই গল্প করে চলেছি। সারা মুখে আনন্দ লেগে আছে। তার মধ্যেই ফোনটা তুললাম।
কী শুনলাম? শুনলাম, বাইক নিয়ে যাওয়ার পথেই অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে ওর। অবস্থা খারাপ। ছুটলাম হাসপাতালে। না, আর দেখা হয়নি কখনও।
সেই রাতের কথা এখনও ভুলতে পারিনি। আর কখনও প্রেম হয়নি। কাউকে ভালো লাগলে, নিজেকে সরিয়ে নিতাম। মনে হত, আরও একজনের যদি একই রকম পরিণতি হয়? বাড়ি থেকে বিয়ের কথা হয়েছে। কাউকে কিছু বলিনি। বিয়েতে রাজিও হতে পারিনি।
এখন বাবা-মায়ের বয়স হয়েছে। ওঁরাও দুশ্চিন্তা করেন আমার জন্য। আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে। কিন্তু আমার কথা কাউকে বোঝাতে পারি না। বিছানায় এখনও চোখ বুজলে ফিরে আসে সেই রাত। বাইকের শব্দ শুনলে ঘুম উড়ে যায়। এত বছর ধরে দুঃখ নিয়ে বেঁচে আছি আমি। এটা কি স্বাভাবিক? কী করব আমি?
বিশেষজ্ঞের জবাব:
সম্পর্কবিদ মৌমিতা গুপ্ত এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য:
আপনি যে মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে আজও যাচ্ছেন, তা মোটেই অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেউ কাউকে চরম ভালোবাসলে, তাঁর ক্ষেত্রে এটি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। দুঃখ ফুরিয়ে যাওয়ার কোনও নির্দিষ্ট সময়কাল হয় না। কারও ক্ষেত্রে কোনও দুঃখ একটু তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে আসে, কারও হয়তো তার সেই কষ্টর স্মৃতি রয়ে যায় বহু বহু কাল।
তবে এক্ষেত্রে আপনাকে মনে রাখতেই হবে, জীবন থেমে থাকতে পারে না। তাই আপনাকেও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। জোর করে কাউকে ভালো লাগতে হবে— এমন নয়। কিন্তু কাউকে ভালো লাগলে নিজেকে গুটিয়ে নেবেন না। এমনটি একেবারেও ভাববেন না, একজনের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে, বারবার এমনই ঘটবে। এ ধরনের কুসংস্কার থেকে নিজেকে মুক্ত করুন।
তবু এর পরেও কষ্ট নাও কমতে পারে। ভালোবাসার সন্ধান নাও পেতে পারেন। রাতে ঘুম নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে চিঠে লিখে নয়, কোনও মনোবিদের কাছে সরাসরি হাজির হয়ে তাঁর পরামর্শ নিন, তিনি আপনাকে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার রাস্তা দেখাতে পারবেন।