রাতে শুয়েও কিছুতেই ঘুম আসে না। অনিদ্রায় ভোগা মানুষের সংখ্যা নেহাত্ কম নয়। এর ফলে মস্তিষ্কের রক্তপাতের সম্ভাব্য ঝুঁকি থাকতে পারে বলে জানা যাচ্ছে এক সাম্প্রতিক গবেষণায়। অ্যানিউরিজম ফেটে যাওয়ার ফলে হতে পারে বড়সড় অঘটন। ধূমপানের অভ্যাস ও উচ্চ রক্তচাপ থাকলেও এই ঝুঁকি রয়েছে।
গবেষণাটি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি ওপেন-অ্যাক্সেস জার্নাল এটি।
বিশ্বব্যাপী ৩ শতাংশেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কে অবিচ্ছিন্ন রক্তনালীর ত্রুটি রয়েছে। একে ইন্ট্রাক্রানিয়াল অ্যানিউরিজম বলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি ফাটে না। প্রায় ২.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই ইন্ট্রাক্রানিয়াল অ্যানিউরিজম ফেটে যেতে পারে। এর ফলে একটি সাবরাচনয়েড হেমোরেজ (SAH) হতে পারে। সহজ বাংলায় যাকে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ বলা যেতে পারে।
SAH এক ধরণের স্ট্রোক। এই স্ট্রোকে মস্তিষ্কের পৃষ্ঠের রক্তনালী ফেটে মস্তিষ্ক এবং মাথার খুলির মধ্যবর্তী স্থানে রক্তপাত হয়।
'অ্যানিউরিজমগুলি ফেটে যাওয়া অত্যন্ত মারাত্মক বিষয়৷ তাই এই ঝুঁকির কারণগুলি আগে থেকে সনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,' বলছেন গবেষণার লেখক সুজানা সি. লারসন, পিএইচডি, কার্ডিওভাসকুলার এবং পুষ্টি মহামারীবিদ্যা ইউনিটের সহযোগী অধ্যাপক৷ সুইডেনের করোলিনস্কা ইনস্টিটিউট এবং সুইডেনের উপসালা ইউনিভার্সিটির মেডিকেল এপিডেমিওলজির ইউনিটে কর্মরত তিনি।
ইন্ট্রাক্রানিয়াল অ্যানিউরিজম এবং/অথবা অ্যানিউরিজম ফেটে যাওয়ার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখেন গবেষকরা। ধূমপান এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো কারণগুলিও অধ্যয়ন করেন তাঁরা। এর পাশাপাশি কম আলোচিত বিভিন্ন কারণগুলিও পর্যালোচনা করা হয় এই গবেষণায়। অথ্যধিক কফি পান করা, ঘুম, শারীরিক কার্যকলাপ, বডি মাস ইনডেক্স (BMI), রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা, টাইপ টু ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, কিডনির কার্যকারিতা ইত্যাদির সঙ্গে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের সম্পর্ক মূল্যায়ন করেন তাঁরা।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বংশগত অনিদ্রায় ভোগা ব্যক্তিদের ইন্ট্রাক্রানিয়াল অ্যানিউরিজমের ঝুঁকি প্রায় ২৪ শতাংশ বেশি থাকে।
অন্যদিকে ধূমপায়ীদের ইন্ট্রাক্রানিয়াল অ্যানিউরিজমের ঝুঁকি অধূমপায়ীদের তুলনা প্রায় তিনগুণ বেশি। উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রেও মিলেছে একই পরিসংখ্যান।
তবে উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা এবং উচ্চ বিএমআই-এর কারণে ইন্ট্রাক্রানিয়াল অ্যানিউরিজম এবং অ্যানিউরিজমাল সাবরাচনয়েড রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়ে না বলে জানা গিয়েছে।
'অনিদ্রা এবং ইন্ট্রাক্রানিয়াল অ্যানিউরিজমের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে এর আগে গবেষণা করা হয়নি,' জানালেন সুজানা সি. লারসন। 'আমাদের গবেষণা এটাই প্রমাণ করছে যে মস্তিষ্কের অ্যানিউরিজম এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকির কারণগুলি মানুষের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই৷ অর্থাত্ ঝুঁকির কারণগুলি আগে থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আগামিদিনে এ বিষয়ে আরও গবেষণা চলবে,' জানান তিনি।
২০১৬ সালে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি অনুসারে, ঘুমের সময়কাল এবং গুণমান, জীবনযাত্রা, এক্সারসাইজ, অপর্যাপ্ত এবং নিম্নমানের ঘুম এবং ঘুম সংক্রান্ত ব্যাধির ফলে উচ্চ রক্তচাপ বাড়তে পারে।
ফলে অনিদ্রা থেকেই হতে পারে উচ্চ রক্তচাপ। আর দীর্ঘ মেয়াদে এর থেকেই হতে পারে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের মতো সাংঘাতিক ঘটনা।
বিবৃতিতে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঘুমের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা সঠিক সময়ে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হলে, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি এড়ানো যেতে পারে।
অনিদ্রার সমস্যা দূর করবেন কী করে?
১. রোজ অন্তত ৩০ মিনিট শারীরিক কসরত করুন। ঘুম তাড়াতাড়ি আসবে।
২. ঘুমের আগে ১ ঘণ্টা জল পান কম করুন। এর ফলে ঘুমের মাঝে প্রসাবের জন্য উঠতে হবে না।
৩. বিছানায় ফোন ঘাঁটার অভ্যাস ত্যাগ করুন। ঘুমোতে যাওয়ার ১ ঘণ্টা আগে থেকে ফোন বিছানা থেকে দূরে কোথাও রেখে দিন।
৪. ঘুমনোর আগে বই পড়ার অভ্যাস করুন।
৫. রাতে ঘুমের আগে অতিভোজন করবেন না।
৬. অন্তত ৮.৩০ ঘণ্টা সময় রেখে অ্যালার্ম দিন। ঘুম আসতে ৩০ মিনিট লাগবে ধরে অ্যালার্ম সেট করুন।
৭. সন্ধ্যার পর ধূমপান, চা-কফি পান করবেন না।
৮. নিজে নিজে ঘুমের ওষুধ খেতে যাবেন না।
৯. রাতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার কম করুন। উত্তেজক সিনেমা-ভিডিয়ো দেখা, গান শোনা এড়িয়ে চলুন। হালকা স্লো মিউজিক শুনতে পারেন।
১০. এর পরেও ঘুমের সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।