স্তন্যপান শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়। জন্মের পর প্রথম ছ'মাস শিশুরা দুধ ছাড়া অন্য কোনও খাবার খেতে পারে না। বিশেষজ্ঞরাও এই সময় শিশুকে শুধু মায়ের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে প্রথম ছমাস শুধু মায়ের দুধ খাওয়ালে শিশুর খাদ্যযন্ত্র ও শ্বাসযন্ত্রের নানা সমস্যা এড়ানো যায়। আজ ১২ই নভেম্বর আন্তর্জাতিক নিউমোনিয়া দিবস। শ্বাসযন্ত্রের নানা সমস্যার মধ্যে একটি গুরুতর রোগ হল নিউমোনিয়া। বেশকিছু গবেষণায় জানা গিয়েছে, প্রথম ছমাস মাতৃস্তন্য পান করায় শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়। তুলনায় যে শিশুরা এই বয়সে স্তন্যপান করে না, তাদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি। জন্মের পর প্রথম ২৩ মাস শিশুর জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে সঠিক নিয়ম মেনে স্তন্যপান করালে নিউমোনিয়া থেকে মৃত্যুর আশঙ্কা অনেকটাই এড়ানো যায়।
কেন স্তন্যপান জরুরি?
শিশুর জন্মের পর মায়ের প্রথম দুধ হল কলোস্ট্রাম। হলুদ রঙের গাঢ় এই দুধ শিশুকে খাওয়ানো একান্ত জরুরি। কলোস্ট্রাম সদ্যজাত শিশুর প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে মুখ্য ভূমিকা নেয়। এছাড়াও মায়ের দুধ শিশুর খাদ্যনালীর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে নানারকম রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাশাপাশি শ্বাসযন্ত্রের নানা রোগও এড়াতেও সাহায্য করে।
মায়ের দুধে থাকে অলিগোস্যাকারাইড, ইমিউনোগ্লোব্যুলিন-এ, ল্যাক্টোফেরিন নামক রোগ প্রতিরোধকারী পুষ্টি উপাদান। এগুলিই শিশুর অনাক্রম্যতা গড়ে তোলে।
মাতৃস্তন্যের পুষ্টিগুণ
- মাতৃদুগ্ধে থাকে বেশ কয়েকটি সংক্রমক বিরোধী ও রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি। এই অ্যান্টিবডি শিশুর জন্য একান্ত জরুরি।
- মায়ের দুধে প্রোটিন, ভিটামিন, ফ্যাট, মিষ্টি ও জলের ভাগ সঠিক পরিমাণে থাকে। সঠিক পরিমাণে থাকা এই পুষ্টি উপাদানগুলি শিশুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
- প্রথম কয়েক মাসে শিশুর ওজন বৃদ্ধি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মায়ের দুধ বয়স অনুযায়ী শিশুর ওজন সঠিকভাবে বাড়তে সাহায্য করে।
- বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুর কিছু অপরিহার্য পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। মাতৃদুগ্ধে থাকা উপকরণগুলো শিশুর এই চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
- শিশুর মুড নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জন্মের পর নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় খুদের নানা সমস্যা হতে পারে। মাতৃস্তন্যই এই সময় শিশুকে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করে।
- নিউমোনিয়া ছাড়াও ডায়রিয়া, অপুষ্টি ইত্যাদি সমস্যাও দেখা দিতে পারে সদ্যজাত শিশুর দেহে। এছাড়াও কাশির সমস্যা ও হাইপোক্সিমিয়াও শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। নিয়মিত স্তন্যপান করালে শিশুকে এই সবকটি সমস্যা থেকেই নিরাপদে রাখা যেতে পারে।