বাঙালি, ডিমাসা, আর মণিপুরী,তিন জাতিকেই মিলিয়ে দিলেন দশভুজা। যাবতীয় দ্বন্দ্ব ভুলে অসমের ডিমাসা রাজের প্রতিষ্ঠিত প্রাচীন দশভূজা মন্দিরে আরাধনায় মাতলেন সাধারণ মানুষ। কথিত আছে, কাছার জেলায় ১৮৩০ সালে ডিমাসা রাজত্বের শেষ রাজাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। এদিকে অশনি সংকেতটা অনেকদিন ধরে আঁচ করছিলেন পরিবারের সদস্যরা। মাইবাং এলাকায় গোপন ডেরাও তৈরি হয়েছিল তাঁদের জন্য। ডিমাসার রাজা অস্ত্রপুজো করতেন, পরে সেটি কালক্রমে দুর্গাপুজোর রূপ নেয়। ১৭০১-১৭০৬ সালের মধ্য়ে দুর্গা মন্দিরও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল।
এদিকে সেই দুর্গাপুজোকে ঘিরে আজও তিনজাতির মিলন ঘটে অসমে। ডিমাসা ও মণিপুরীরা দশভুজার পুজো করতে আসেন। এদিকে বাঙালি পুরোহিত সারাবছর মন্দিরের দেখভাল করেন। এদিনের পুজোও তিনিই করেন। এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই ডিমাসা ও মণিপুরীদের মধ্যে নানা বিষয়ে সংঘাত লেগেই আছে। এর সঙ্গে ভারত ভাগের পর বাঙালি শরনার্থীদের নিয়ে নতুন অশান্তি মাথাচাড়া দেয় অসমে। তবে এই পুজোই ভুলিয়ে দিয়েছে যাবতীয় দ্বন্দ্ব।
ঐতিহাসিকদের মতে, প্রায় ৩২০ বছর আগে ডিমাসা রাজবংশের শেষ রাজা গোবিন্দ চন্দ্র নারায়ণের উদ্যোগে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল। শিব, বিষ্ণু ও ব্রহ্মা মন্দিরও ছিল। কিন্তু সেটি পরে ধ্বংস হয়ে যায়। ইতিহাসবিদ বিশ্বজ্যোতি বর্মন বলেন, অস্ত্র পুজোর মাধ্যমে প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়েছিল। ১৭০৬ সালে আগে রাজা যখন সস্ত্রীক এই এলাকায় আসতেন তখনই এখানে দশভুজার মন্দির তৈরি হয়। দেবীর পুজোর জন্য তাঁরা জয়ন্তিয়া রাজবংশের থেকে হিন্দু ব্রাহ্মণ নিয়ে আসতেন। এমনটাও কথিত আছে যে মণিপুরী রাজা এখানাকার মূর্তি নিয়ে চলে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নানা কারনে তা পারেননি। এখানে আজও বৈদিক রীতিতে পুজো হয়।