অবশেষে বাংলাদেশ পুলিশের জালে ধরা পড়েছে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকিয়ার প্রতিষ্ঠাতা শামিন মাহফুজ। ধরা হয়েছে তার স্ত্রী'কেও। তারপরই একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এসেছে। বাংলাদেশ পুলিশ জানিয়েছে, সশস্ত্র 'জেহাদের' লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ শিবির চালু করতে চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) প্রধান নাথান বমের সমঝোতাপত্র স্বাক্ষর করেছিল মাহফুজ। সেইমতো শিবিরও চলছিল। বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ ছড়াতে কীভাবে দুই সংগঠন কাজ করবে, কোন পথে এগিয়ে যাবে, কীভাবে জামাতুলকে শক্তিশালী করা যাবে, সেই সংক্রান্তও পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
আরও পড়ুন: কিস্তির অর্ধেক টাকা দিলেই আর খণ খেলাপি নয়, বাংলাদেশের নয়া নিয়ম নিয়ে বিতর্ক
শনিবার বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মহম্মদ আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গি সংগঠন তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল কট্টরবাদী মাহফুজের। সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় কেএনএফ প্রধান নাথানের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিল। সেইসময় দু'জনে একাধিকবার চট্টগ্রামের পার্বত্য অঞ্চল পরিদর্শনেও গিয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, পরবর্তীতে ২০১৪ সালে মাহফুজকে আটক করা হয়েছিল। জেলে আরও একাধিক উগ্রপন্থীর সংস্পর্শে এসেছিল এবং নয়া জঙ্গি সংগঠন গড়ে তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল। সেজন্যই ২০১৯ সালে নাথানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছিল মাহফুজের। তারপর ২০২০ সালে কক্সবাজারের একটি হোটেলে কেএনএফ এবং জামাতুলের মধ্যে সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যে নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান জানিয়েছেন,হাতে লেখা ওই দু'পাতার নথিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল যে কীভাবে জামাতুল সন্ত্রাস ছড়াবে। সেই কাজে দুই সংগঠন কীভাবে একে অপরের সাহায্য করবে, তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। তারপর কেএনএফের শিবিরের পাশেই জেহাদ শিবির খোলা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান।
তিনি জানিয়েছেন, ২০২১ সালের এপ্রিলে সিলেট থেকে যখন ১০০ জনের মতো তরুণ নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছিল, তখনই ওই জঙ্গি শিবির চালু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ধাপে-ধাপে ওই জঙ্গি শিবিরে প্রশিক্ষণ চলতে থাকে। আবার সম্প্রতি কুমিল্লা থেকে যখন সাতজন নিখোঁজ হয়ে যায়, সেইসময় জঙ্গি শিবিরে ১৫ জনের মতো যোগ দিয়েছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
এমনিতে কেএনএফ এবং জামাতুল যে জঙ্গি কার্যকলাপ চালাচ্ছে, তা রোখার জন্য গত বছর অক্টোবর ভারত সীমান্তের কাছে তিনটি প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়েছিল বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন। সংবাদসংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেইসময় অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অভিযানের জেরে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মিজোরামে চলে গিয়েছিলেন প্রচুর গ্রামবাসী।
ওই সংবাদসংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরবর্তীতে কেএনএফের সঙ্গে সংঘর্ষে বাংলাদেশের সেনার পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছিল। তাতে কেএনএফ এবং জামাতুল বিরোধী অভিযানে ছেদ পড়েনি। তারপর অবশেষে শুক্রবার রাত ১০ টা নাগাদ (বাংলাদেশের সময়) ঢাকার ডেমরা থেকে মাহফুজ ও তার স্ত্রী'কে গ্রেফতার করা হয়েছে।