পোশাক রফতানিতে চিনের পরেই দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু বর্তমানে গোটা বিশ্ব জুড়েই পোশাকের চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। ফলে মন্দার সম্মুখীন হতে হচ্ছে ওপার বাংলাকে। এমনিতেই বাংলাদেশ এখন একটি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সেখানে যদি এভাবে পোশাকের রফতানি কমতে থাকে এবং তাদের বিশ্ব বাজারে স্থান সঙ্কুচিত হতে থাকে তাহলে তা বাংলাদেশকে আরও বিপদের দিকে ঠেলে দেবে।
একদিকে যেমন বিশ্ব জুড়ে পোশাকের চাহিদা কমছে তেমনই অন্যদিকে বাংলাদেশে বাড়ছে জ্বালানি সমস্যা। এই জ্বালানি সংকটের ফলে বাড়ছে পোশাক ব্যবসায়ীদের ব্যয়ের পরিমাণ। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার ফলে বাংলাদেশের একাধিক পোশাক প্রস্তুতকারক সংস্থাকে ডাইং এবং লন্ড্রির জন্য জেনারেটরের উপর ভরসা করতে হয়। দিনে কম করে তিন ঘণ্টা করে জেনারেটর চালাতে হয় তাদের।
স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ লিমিটেড, গ্যাপ ইনকর্পোরেটেড সরবরাহকারী হচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম নামকরা পোশাক রফতানিকারক সংস্থা। এই স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান জানিয়েছেন, জেনারেটর থেকে যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয় সেটার দাম অনেক বেশি। তাঁর মতে জাতীয় গ্রিড থেকে তাঁরা যে দামে বিদ্যুৎ পান তাঁর তিন গুণ টাকা লাগে জেনারেটর ব্যবহার করে কাজ করলে। জেনারেটর ডিজেলে চলে। আর বর্তমানে ডিজেলের দাম আকাশছোঁয়া। অন্যদিকে দেশে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকবে বলে তো তাঁরা কাজ থামাতে পারেন না, কারণ তাহলে সমস্ত কাপড় নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করেই কাজ করতে হচ্ছে। রেনেসাঁ ক্যাপিটালের গ্লোবাল চিফ ইকোনমিস্ট চার্লি রবার্টসন এই বিষয়ে জানিয়েছেন, পোশাক একটি বিচক্ষণ বিষয়, যদি ইউরোপে শক্তির দাম বাড়ে তাহলে সাধারণ মানুষ কম প্রয়োজনীয় জিনিস কেনাকাটায় কাটছাঁট করবেই। আর পোশাক এখন সেই দলে পড়ে গিয়েছে। ফলে কমছে পোশাকের চাহিদা।
এছাড়াও শ্রীলঙ্কার একটা প্রভাব তো রয়েছেই। পাকিস্তানি মুদ্রা ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে রফতানির কারণে, যেটা আখেরে বাংলাদেশের উপরেই চাপ বাড়াবে। কারণ ইউরোপের অত বড় রফতানির বাজার এখন কম টেক্সটাইল কিনবে। এর ফলে বাংলাদেশের বিক্রির বৃদ্ধি আঘাতপ্রাপ্ত হবে।
একদিকে জ্বালানির কারণে বিদ্যুতের সমস্যা, অন্যদিকে বাড়তে থাকা ব্যয় আর কমতে থাকা বাজারের কারণে বাংলাদেশের বস্ত্র রফতানি ব্যবসার নাভিঃশ্বাস উঠে গিয়েছে। যার কারণে বাংলাদেশের যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল তা কমতে কমতে জুলাই মাসে ৩৯.৭৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অথচ এটাই গত বছর পর্যন্ত ৪৫.৩৩ বিলিয়ন ডলার ছিল। স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের রহমান এই বিষয়ে বলেন, করোনা এবং যুদ্ধের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যার অনিচ্ছাকৃত শিকার হচ্ছেন তাঁরা।