গত কয়েকদিনের রাজনৈতিক হিংসার আবহে বাংলাদেশে বিরোধীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই আবহে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে চরম হুঁশিয়ারি দিল বিরোধী দল বিএনপি। তাঁদের দাবি, যদি বিরোধীদের ওপর সরকারের 'অত্যাচার' না থামে, এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার না আসে, তাহলে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এর নেপথ্যে তাদের অঙ্ক - দেশের প্রধান বিরোধীদল নির্বাচনে অংশ না নিলে সেই নির্বাচনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন উঠবে। এই আবহে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ সরকারের বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠবে এবং বাইরের হস্তক্ষেপ আসতে পারে। উল্লেখ্য, এর আগে আমেরিকা বাংলাদেশে 'স্বচ্ছ' নির্বাচন করার জন্য হাসিনা সরকারকে 'আল্টিমেটাম' দিয়েছিল। আর তারই ভরসায় আছে বিএনপি। (আরও পড়ুন: ভোটে 'কালো টাকা' রুখতেই আনা হয়েছে নির্বাচনী বন্ড, সুপ্রিম কোর্টে বলল কেন্দ্র)
বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে কয়েক মাস আগেই আওয়ামি লিগ সরকারকে 'হুঁশিয়ারি' দিয়েছিল আমেরিকা। এদিকে সম্প্রতি আমেরিকার এই মনোভাবের জেরে সেদেশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বাংলাদেশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। আর তারই মাঝে আমেরিকা ইস্যুতে মধ্যস্থতার জন্য ভারতের দ্বারস্থ হয়েছিল বাংলাদেশ। এই আবহে সম্প্রতি আমেরিকার উদ্দেশে ভারত বার্তা দেয়, নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে বেশি চাপ দিলে কিন্তু তারা চিনের ঘনিষ্ঠ হয়ে যাবে। আর তাতে কট্টরপন্থীরা মদত পাবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে বলেও মত ভারতের।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই শেখ হাসিনার আওয়ামি লিগ অপরজেয় হয়ে উঠেছে সেদেশে। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলনেতা বিএনপি-কে দমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামি লিগের বিরুদ্ধে। এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছিল। তবে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকার সেই অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে। এরই মাঝে সম্প্রতি আমেরিকার সেক্রেটারি অফ স্টেট অ্যান্টনি ব্লিনকেন ঘোষণা করেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে অসম্মান করা ব্যক্তিদের মার্কিন ভিসা দেওয়া হবে না। এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাবের কিছু কর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল আমেরিকা। হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের এই মনোভাবই 'ভরসা' বিএনপির।
প্রসঙ্গত, আগামী বছরই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে সাধারণ নির্বাচন। তার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকার রাস্তায় মিছিল বের করেছিল সেদেশের বিরোধী দলগুলি। আর সেই মিছিল থেকেই সাম্প্রতিককালে হিংসা ছড়িয়েছিল সেই দেশে। বিরোধী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে সেদিন মৃত্যু হয়েছিল এক পুলিশকর্মীর। এদিকে এক বিক্ষোভকারীরও মৃত্যু হয় সেদিনের সংঘর্ষে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকার রাস্তায় পরপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। গ্রেফতার করা হয় হাজারেরও বেশি বিরোধী সমর্থকদের। শনিবারের সেই হিংসার পর রবিবারও পরিস্থিতি থমথমে ছিল রাজধানীতে। রবিবারও রাজনৈতিক হিংসায় দু'জনের মৃত্যু হয় বাংলাদেশে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, গত শনিবার বাংলাদেশের দু'টি প্রধান বিরোধী দল - বিএনপি এবং জামাতের প্রায় লক্ষাধিক সমর্থক মিছিল বের করেছিল ঢাকায়। তাদের দাবি ছিল, নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে হবে। বদলে গঠন করতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন নির্বাচন হলে তা সুষ্ঠু হবে না। এই আবহে হাসিনার সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল বের হয়। সেই মিছিল পুলিশের বাধা পেতেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। ঢাকায় পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালায় বিরোধী সমর্থকরা। পুলিশের যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকী বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বাসভবনেও হামলা চালানো হয়।