নির্বাচনী বন্ডের বিরোধিতায় দায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টে চলছে শুনানি। সেই সুনানির পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল কেন্দ্রের তরফে শীর্ষ আদালতে দাবি করা হল, নির্বাচনে কালো টাকা রুখতেই নাকি নির্বাচনী বন্ড আনা হয়েছে। সরকারের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এই বিষয়ে আদালতে বলেন, 'নির্বাচনে কালো টাকা খরচের বহর দেশের জন্য চিন্তার বিষয় ছিল। এই সমস্যার সমাধানের জন্যই ভেবেচিন্তে নির্বাচনী বন্ডের স্কিম আনা হয়েছিল।' এদিকে সরকার যে কালো টাকার বিরুদ্ধে অনবরত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, তার প্রমাণে সলিসিটর জেনারেলের দাবি, ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ২.৩৮ লাখ ভুয়ো সংস্থা বা শেল কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকার পদক্ষেপ করেছে। সরকারের দাবি, এর আগে নির্বাচনে কালো টাকা রুখতে বহু উপায়ে চেষ্টা করা হয়েছিল। তবে ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের মাধ্যমে এই বন্ডের মাধ্যমে সাদা টাকা আসছে রাজনীতিতে। (আরও পড়ুন: 'পরস্পরবিরোধী মত সুপ্রিম রায়ে', সমলিঙ্গে বিবাহের আইনি বৈধতার দাবিতে রিভিউ পিটিশন দাখিল শীর্ষ আদালতে)
এর আগে সাংবিধানিক বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হওয়ার আগেই কেন্দ্রের তরফ থেকে অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমনি রবিবার শীর্ষ আদালতকে বলেছিলেন, 'নির্বাচনী বন্ডের টাকা কোথা থেকে আসছে, তা জানার অধিকার আম নাগরিককে দেয়নি সংবিধান।' উল্লেখ্য, এর আগে এই মামলাটি ছিল প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চের কাছে। পরে ডিভিশন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণ দেয়, এই মামলাটির গুরুত্ব বিবেচনা করে আমরা মনে করছি যে বৃহত্তর বেঞ্চেরই এই নিয়ে চূড়ান্ত রায় দেওয়া উচিত। এই আবহে সাংবিধানিক বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে ৩১ অক্টোবর থেকে।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ ও অসম বিধানসভা নির্বাচেনর আগে নির্বাচনী বন্ডের বিরোধিতায় জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। মামলাকারীদের অভিযোগ ছিল, রাজনৈতিক দলগুলির অবৈধ এবং বিদেশ থেকে এই বন্ডের মাধ্যমে টাকা পেতে পারে এবং এতে গণতন্ত্র ধ্বংস হবে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে নির্বাচনী বন্ডের স্কিম আনা হয়। তার পর থেকে কোনও বাধা ছাড়াই বন্ড বিক্রি করা হচ্ছে। এই আবহে এর আগে এই বন্ড বিক্রির ওপর স্থগিতাদেশ জারি করতে চায়নি সর্বোচ্চ আদালত। এদিকে নির্বাচন কমিশনের তরফে সর্বোচ্চ আদালতকে জানানো হয়েছিল, রাজনৈতিক দলগুলির হাতে নগদের অভাব থাকায় নির্বাচনী বন্ড বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কমিশনের দলের তরফ থেকে দাখিল করা খরচ সংক্রান্ত রিপোর্টে জানিয়ে দেওয়া হয়, নির্বাচনী বন্ড থেকে কত টাকা আয় হয়েছে। সেই টাকার কতটা খরচ করা হয়েছে। বাকি রয়েছে কত টাকা। কমিশনের দাবি, নির্বাচনী বন্ডে কোনও অস্বচ্ছতা নেই।
এদিকে ২০২২ সালের গুজরাট, হিমাচলের বিধানসভা ভোটের আগে প্রথা ভেঙে নির্বাচনী বন্ড ইস্যু করার অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সাধারণত কোনও মাসের পয়লা তারিখ থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত চালু থাকে নির্বাচনী বন্ড বেচাকেনা বা ভাঙানোর ব্যবস্থা। তবে গতবছর বন্ড বিক্রি হয় ৯ নভেম্বর থেকে। বন্ড বিক্রি চলে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। এর আগে দেশে প্রথমবার নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়েছিল ২০১৮ সালের ১ থেকে ১০ মার্চ। রাজনৈতিক দলগুলিকে দেওয়া অনুদানে স্বচ্ছতা আনতে এই বন্ড বিক্রি শুরু করা হয়েছিল। নগদ টাকার পরিবর্তে এই বন্ড কিনে দলগুলিকে অনুদান দেওয়া যেতে পারে। বন্ড ইস্যু হওয়ার দিন থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সেটি বৈধ থাকে। উল্লেখ্য, গত লোকসভা নির্বাচনে অন্তত ১ শতাংশ ভোট পাওয়া রাজনৈতিক দলই বন্ডের মাধ্যমে অনুদান পাওয়ার যোগ্য।