বাঙালির বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে জাতীয় প্যারেড ময়দানে কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ৷ উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন৷ তাঁদের সঙ্গী হন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ৷
শের-ই-বাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড ময়দানে বিজয়ের ৫০ বছরের বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে মুক্তিযোদ্ধা কন্টিনজেন্ট, সশস্ত্র বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন শাখা ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের অগ্রগতির তথ্য জানানো হয় অতিথিদের৷ এবারই প্রথম বন্ধু দেশ ভারত, ভুটান,যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও মেক্সিকোর সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশের বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে৷ সকাল সাড়ে ১০টায় রাষ্ট্রপতি প্যারেড স্কোয়ারে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা তাঁকে স্বাগত জানান৷ কিছুক্ষণ পরেই আসেন ভারতের রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ৷ তাঁকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রত এবং সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের আয়োজনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্ট গার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা সুসজ্জিতভাবে কুচকাওয়াজে অংশ নেন৷ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর শেখ রেহানা, স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, বিদেশি রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন মিশনের প্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা৷ ভারতের রাষ্ট্রপতির স্ত্রী সবিতা কোবিন্দ, রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানমও কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন৷
বর্ণাঢ্য আয়োজনের অভিবাদন মঞ্চের সামনে রাখা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল একটি প্রতিকৃতি এবং দুই পাশে ছিল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি৷ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির দুই পাশে জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধের সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবি ছিল৷ একপাশে কালো জমিনে সোনালী হরফে ১৯৭১ অন্যপাশে ২০২১ লিখে ৫০ বছরের ব্যাপ্তি বোঝানো হয়েছে৷ কুচকাওয়াজের শুরুতে বঙ্গবন্ধুর একটি বিশাল প্রতিকৃতি প্রদর্শন করার পরে সাত বীরশ্রেষ্ঠর আবক্ষ মূর্তি স্যালুটিং ডায়াসের সামনে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়৷
রাষ্ট্রপতি খোলা জিপে চড়ে কুচাকাওয়াজ পরিদর্শন করেন এবং পরে অভিবাদন মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিবাদন গ্রহণ করেন৷ এবারের কুচকাওয়াজের অধিনায়ক ছিলেন নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ শাহিনুল হক৷ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অভিবাদন মঞ্চে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক এবং তিন বাহিনীর প্রধানরা৷
পাকিস্তানি শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটাতে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতার জন্য যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, তা সফল পরিণতি পায় নয় মাস পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে৷ সেদিন ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (এখন সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেন যুদ্ধে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি৷ সেই কারণেই ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস; বিশ্বের হাতেগোনা যে ক'টি দেশের স্বাধীনতা দিবসের পাশাপাশি বিজয় দিবসের মতো উৎসবের উপলক্ষ রয়েছে, তার একটি বাংলাদেশ৷
বৃহস্পতিবার বিজয় দিবসের সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের চিরায়ত আয়োজনে উদযাপনের সূচনা হয়৷ বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এবারের মূল আয়োজন৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিচালনায় সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথে এ অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে৷ জাতীয় পতাকা হাতে দেশের সর্বস্তরের মানুষ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন৷