সুপ্রিম কোর্টে শুরু হল বিকিন বানোর অপরাধীদের মুক্তির বিরোধিতায় করা মামলার শুনানি। গতকাল শুনানির সময় বিলকিস বানোর আইনজীবী শোভা গুপ্তা ২১ বছর পুরনো সেই বিভীষিকাময় ঘটনা ফের একবার তুলে ধরেন আদালতের সামনে। পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে 'রক্তপিপাসু' আখ্যা দেন তিনি। তিনি বলেন, 'বিলকিসকে অন্তসত্ত্বা অবস্থায় শুধু গণধর্ষণই করা হয়নি। তাঁর ১৪ জন আত্মীয়কে খুন করা হয়। নিহদের মধ্যে ছিল বিলকিসের দুই বছরের শিশুকন্যাও। এই মানুষদের ক্ষমা করা যায় না।' বিলকিসের আইনজীবী বলেন, 'জেল সুপার সরকারকে যে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন, তাতে উল্লেখ করা হয়েছে যে জেলে এই ১১ জনের আচরণ সন্তোষজনক ছিল। তবে তাদের অপরাধের বিষয়টি গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।' এদিকে গুজরাট সরকারের যুক্ত, ১৯৯২ সালের নীতি অনুযায়ী মুক্তি দেওয়া হয়েছে এই ১১ জনকে। যদিও সোভাদেবীর দাবি, গুজরাট পুলিশ, সিবিআই এবং মুম্বইয়ের ট্রায়াল কোর্ট গুজরাট সরকারের এই পদক্ষেপকে সায় দেয় না।
প্রসঙ্গত, বিলকিস বানোর গণধর্ষকদের গত ১৫ অগস্ট মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে বিতর্ক চরমে। সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য সুভাষিণী আলি, তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং অন্য একজন আদালতে এই ১১ জনের মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন। উল্লেখ্য, ২০০২ সালের মার্চ মাসে দাহোদ জেলায় লিমখেড়া তালুকায় রাধিকাপুর গ্রামে একদল দুষ্কৃতী বিলকিস বানোর পরিবারের উপর হামলা চালিয়েছিল। গণধর্ষণ করা হয় বিলকিসকে৷ তাঁর পরিবারের ৭ জন সদস্যকে খুন করা হয়। পরিবারের অন্য ৬ জন সদস্য পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন। পরে ২০০৪ সালে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়েছিল। মুম্বইয়ে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি ১১ ধর্ষকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করেছিল। পরবর্তীকালে সেই সাজার মেয়াদ বহাল রেখেছিল বম্বে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট।
তবে গতবছর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রাজ্য সরকার পঞ্চমহলের কালেক্টর সুজল মায়াত্রার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দোষীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে। সর্বসম্মতিক্রমে কারাবাসের সময় কমানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় কমিটিতে। সেই মতো গতবছর স্বাধীনতা দিবসের দিন দোষীদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। সাজাপ্রাপ্তদের আগাম মুক্তি দেওয়ার পর প্রকাশ্যে তাদের মালা পরানো হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল সংবর্ধনা। মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করে বিলকিস দাবি করেছিলেন, শীর্ষ আদালতের নিয়ম লঙ্ঘন করে ওই ১১ জন ধর্ষককে ছেড়ে দিয়েছে গুজরাট সরকার। এই নিয়ে সুভাষিণী আলি, মহুয়া মৈত্ররাও মামলা করেছিলেন। সেই সব মামলা গ্রহণ করেছিল শীর্ষ আদালত। সেই মতো এই নিয়ে শুনানি শুরু হয়েছে শীর্ষ আদালতে।