গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্তেই মুক্তি পেয়েছে বিলকিস বানো মামলার ১১ জন অপরাধী। এই আবহে শীর্ষ আদালতে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে গুজরাট সরকারকে। ১১ দোষীর মুক্তির বিরোধিতা করে দায়ের করা জনস্বার্ধ মামলার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে এবার শীর্ষ আদালতে নিজেদের যুক্তি পেশ করল গুজরাট সরকার। গুজরাট সরকার বুধবার সুপ্রিম কোর্টকে বলেছে যে বিলকিস বানো ধর্ষণ মামলায় ১১ জন দোষীকে মুক্তি দেওয়ার আদেশ নিয়ে তৃতীয় পক্ষের কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে না। গুজরাট সরকারের যুক্তি, সাজা কমানোর আদেশ নিয়ে কোনও জনস্বার্থ মামলা করা যায় না।
এদিকে গুজরাট সরকারের এই যুক্তির প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ বিরক্তি প্রকাশ করে। সুপ্রিম বেঞ্চের তরফে বলা হয়, 'এটা কোনও অপরাধমূলক বিষয় নয়। এটি একটি প্রশাসনিক আদেশ। সাজা কমানোর আদেশ ভালো, খারাপ বা তা জনস্বার্থে কি না, এই প্রশ্ন প্রশাসনিক আইনের আওতায় পড়ে। আমাদের দেখান তো যে কোথায় জনস্বার্থ মামলার মাধ্যমে প্রশাসনিক আদেশকে চ্যালেঞ্জ করা যায় না।' তবে এরপরও গুজরাট সরকার নিজেদের যুক্তিতে অটল থাকে। তারা বলে, প্রতিদিনই কত রাজ্যে বন্দিদের সাজা কমিয়ে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এই আবহে যে কেউ এসে তাহলে জনস্বার্থ মামলা করতে পারে সেই সব ক্ষেত্রে। তাই এই মামলার প্রেক্ষিতেও জনস্বার্থ মামলাগুলিকে খারিজ করা হোক। উল্লখ্য, এই নিয়ে সুভাষিণী আলি, মহুয়া মৈত্ররা জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন। সেই মামলা গ্রহণ করেছিল শীর্ষ আদালত। তবে তার বিরোধিতা করছে গুজরাট সরকার।
এর আগে বিলকিস বানোর অপরাধীদের আগাম মুক্তি নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে সুপ্রিম কোর্ট। উল্লেখ্য, শীর্ষ আদালতে করা এক রিট পিটিশনের প্রেক্ষিতে অপরাধীদের আগাম মুক্তির বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে সেই রিট পিটিশনের আগে গুজরাট হাই কোর্টে অপরাধীদের আবেদন নাকচ হয়ে গিয়েছিল। এই আবহে নিয়ম মাফিক, সুপ্রিম কোর্টে সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করা যেত। বদলে রিট পিটিশন করা হয়েছিল এবং তা গ্রহণ করেই শীর্ষ আদালতে মামলা চলে। এবং সেই মামলার প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে পদক্ষেপ করে অপরাধীদের মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার।
এই আবহে বর্তমান বেঞ্চ প্রশ্ন করে, 'হাই কোর্টের নির্দেশকে কি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে? তা যদি না হয়ে থাকে তাহলে সেই সময় শীর্ষ আদালত কোন এক্তিয়ারে হাই কোর্টের রায়কে সরিয়ে রেখেছিল?' পাশাপাশি গুজরাট সরকারের আইনজীবীকেও সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন করে, সেই সময় শীর্ষ আদালতে এই মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল কিনা। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর কেন গুজরাট সরকার রিভিউ পিটিশন দাখিল করেনি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি নাগারত্না। প্রসঙ্গত, বিলকিস বানোর গণধর্ষকদের গত ১৫ অগস্ট মুক্তি দেওয়া হয়েছে। যা নিয়ে বিতর্ক চরমে। সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য সুভাষিণী আলি, তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ মহুয়া মৈত্র এবং অন্য একজন আদালতে এই ১১ জনের মুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করে বিলকিসও দাবি করেছিলেন, শীর্ষ আদালতের নিয়ম লঙ্ঘন করে ওই ১১ জন ধর্ষককে ছেড়ে দিয়েছে গুজরাট সরকার।