নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন কংগ্রেস সাংসদ গৌরব গগৈ। পৃথক অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন বিআরএসের সাংসদ নাগেশ্বরা রাও। তবে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আজ সংসদের নিম্নকক্ষে আলোচনা হবে না। নিয়ম মোতাবেক ৫০ জন সাংসদের সমর্থন-সহ সেই অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়া হয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। তারপর সেই অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করেন। তবে কবে আলোচনা হবে, তা এখনও জানাননি। পরবর্তীতে নির্দিষ্ট দিন এবং সময় বরাদ্দ করবেন।
তবে সেই অনাস্থা ‘পরীক্ষা’-য় পাশ করতে মোদী সরকারের যে একটুও ঘাম ঝরবে না, তা ভালোভাবেই জানেন বিরোধী নেতারা। উলটে তাঁদেরই ‘হার’-র মুখে পড়তে হবে। কারণ স্রেফ বিজেপিরই যা সংখ্যা আছে, তাতেই বিরোধীরা দাঁড়াতে পারবেন না। যে বিষয়টি কার্যত স্বীকারও করে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়দের ‘INDIA’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) জোটের নেতারা। তাও পুরোপুরি কৌশলগত কারণে সেই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত।
বিষয়টি নিয়ে সিপিআইয়ের সাংসদ বিনয় বিশ্বম বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে রাজনৈতিক চাল হিসেবে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হচ্ছে। যে রাজনৈতিক চালের ফল মিলবে। এই অনাস্থা প্রস্তাবের ফলে সংসদে আসতে বাধ্য হবেন উনি (প্রধানমন্ত্রী)। মূলত মণিপুর-সহ পুরো দেশ নিয়ে সংসদের কক্ষে আমরা আলোচনা করতে চাই। নম্বর ভুলে যান। ওঁরা নম্বর জানেন। আমরাও নম্বর জানি।’
সেই পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবে পাত্তা দিচ্ছেন না বিজেপি নেতারা। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর কটাক্ষ, আগেও বিরোধীরা অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। এবারও তাঁদের সবক শেখাবেন দেশবাসী। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং বিজেপির উপর আস্থা আছে মানুষের। গতবারও অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। দেশবাসী তাঁদের শিক্ষা দিয়েছিলেন।’
অনাস্থা প্রস্তাবের ইতিবৃত্ত
১) আজকের আগে মোট ২৭ বার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে।
২) ১৯৬৩ সালে প্রথমবার সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল। রক্ষা পেয়েছিল সরকার।
৩) ১৯৭৯ সাল: অনাস্থা প্রস্তাবের মধ্যেই ইস্তফা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই। যিনি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সেই কাজটা করেছিলেন।
৪) ইন্দিরা গান্ধীর বিরুদ্ধে সর্বাধিক ১৫ বার অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল। প্রতিবারই সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরীক্ষা জিতেছিলেন।
৫) লালবাহাদুর শাস্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছিল, সেটা নিয়ে দীর্ঘতম আলোচনা হয়েছিল। ২৪ ঘণ্টা ৩৪ মিনিট চলেছিল বিতর্ক।
৬) সিপিআইএমের জ্যোতির্ময় বসু চারবার অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন।
৭) ২০০৩ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিলেন সোনিয়া গান্ধী।
৮) ২০১৮ সালে ৩৩০-১১৫ ব্যবধানে জিতেছিল মোদী সরকার।