রোগ নির্ণয়ের এই পদ্ধতিতে সম্ভাব্য রোগীর গলা অথবা নাকের ভিতর থেকে সোয়্যাবের নমুনা সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয় না। রোগীর দেহ থেকে রক্ত সেরাম বা প্লাজমা সংগ্রহ করে সাধারণ সরঞ্জামের সাহায্যে তাড়াতাড়ি এই পরীক্ষা করা সম্ভব। জেনে রাখুন অ্যান্টিবডি টেস্ট বা র্যাপিড টেস্ট সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য।
এখনও পর্যন্ত পরীক্ষার যে পদ্ধতি চালু তাকে বলা হয় PCR বা polymerase chain reaction, যা রোগীর গলা বা নাক থেকে নেওয়া সোয়্যাবের মধ্যে থাকা Sars-CoV-2 ভাইরাসকে চিনতে পারে। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষার জন্য ৫ ঘণ্টা সময়ও লাগতে পারে। পরীক্ষার ফল জানা যায় ১৫-৩০ মিনিটের মধ্যে।
অ্যান্টিবডি টেস্টিং পদ্ধতিতে রোগীর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তীব্র সংক্রমণ ঘটেছে এমন এলাকার বাসিন্দাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে দেখা যায় তাঁদের কার কার মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে অথবা নেই। যে সমস্ত রোগী বিশেষ ওষুধ ব্যবহার না করে Covid-19 থেকে সেরে উঠেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা জরুরি। এই ধরনের রোগীদের বলা হয় ‘করোনা-ব্লকার’।
যাঁরা অ্যান্টিবডি টেস্ট বা র্যাপিড টেস্টে পজিটিভ প্রমাণিত হবেন, তাঁদের এরপরে গলা ও নাক থেকে সোয়্যাব সংগ্রহ করে RT-PCR (reverse transcription-PCR) পদ্ধতির দ্বারা চূড়ান্ত পরীক্ষা করা হবে। অর্থাৎ পজিটিভ ফল পাওয়ার পরে আরও একবার যাচাই করে নেওয়া হবে।
এবার দেখে নেওয়া যাক কী ভাবে এই অ্যান্টিবডি টেস্ট বা র্যাপিড টেস্ট করা হয়। এই পরীক্ষায় রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় থাকা অ্যান্টিবডির পরিমাণ যাচাই করে তা করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ করতে সক্ষম কি না, তা দেখা হয়। এর থেকে বোঝা যায়, রোগী এই মুহূর্তে Covid-19 হয়েছেন কি না।
অ্যান্টিবডি টেস্ট বা র্যাপিড টেস্টের সাহায্যে ডেঙ্গি ও চিকুনদুনিয়া-সহ বেশ কিছু রোগের জীবাণু নির্ণয় করা সম্ভব। ভারতের প্রায় প্রতিটি ল্যাবরেটরিতে এই পরীক্ষা সুলভে করার ব্যবস্থা রয়েছে। এই পরীক্ষা করার বিষয়ে বিপুল অভিজ্ঞতা রয়েছে প্যাথোলজিস্টদের। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, এই পরীক্ষায় ব্যবহৃত সরঞ্জাম কম খরচে বিপুল পরিমাণে দ্রুত উৎপাদন করা সম্ভব।
র্যাপিড টেস্টিং কিট ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) দ্বারা অনুমোদিত। এই পদ্ধতি খুবই সহজ এবং এর দ্বারা পরীক্ষার ফলও মেলে দ্রুত ও সঠিক। হাসপাতাল ছাড়াও দেশের যে কোনও উন্নত মানের পরীক্ষাগারে এই টেস্ট করা যায়।
সারা বিশ্বে বর্তমানে দুই ধরনের Covid-19 র্যাপিড টেস্ট চালু রয়েছে। এর একটি হল অ্যান্টিজেন-এর উপস্থিতি পরীক্ষার এবং অন্যটি অপ্রত্যক্ষ অ্যান্টিবডি-র উপস্থিতি পরীক্ষা। অ্যান্টিজেন ডিটেকশন টেস্টে সংক্রমণের সময় নাক ও গলা থেকে নেওয়া নমুনায় ভাইরাল উপাদানের অস্তিত্ব খুঁজে দেখা হয়। কিন্তু এই ধরনের পরীক্ষার ফল জানতে দুই দিন মতো সময় লাগতে পারে। তাই অ্যান্টিবডি টেস্টে রক্তের নমুনা যাচাই করে তাতে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি যাচাই করে সংক্রামিত রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেমন সাড়া দিচ্ছে, তা নির্ণয় করে। টেস্টিং মিক্সে এই নমুনা যোগ করলে তাড়াতাড়ি ফল মেলে।
জেনে রাখা দরকার, SARS-CoV-2 ভাইরাসের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি নির্ণয় পরীক্ষার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক করোনাভাইরাস সংক্রমণে রোগীর শরীরে তার জেরে অ্যান্টিবডির উপর প্রভাব বুঝতে ১০ দিন মতো সময় লেগে যেতে পারে। আবার যে রোগীর শরীর থেকে Covid-19 এর সমস্ত উপসর্গ উধাও হয়েছে, তাঁর শরীরেও অনেক দিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত অ্যান্টিবডি থেকে যেতে পারে।
সাধারণত র্যাপিড টেস্টকে ল্যাবরেটরিতে করা PCR-এর মতো অন্যান্য পরীক্ষার তুলনায় অনেক কম সংবেদনশীল ও অব্যর্থ হিসেবে ধরা হয়। এই কারণে পরীক্ষার ফলে নিশ্চিন্ত না হয়ে তার চিকিৎসকের অনুমোদন সাপেক্ষ বলে গণ্য করা হয়।
র্যাপিড টেস্টে রক্ত, সেরাম বা প্লাজমা নমুনায় SARS-CoV-2-এর প্রভাবযুক্ত IgM এবং IgG অ্যান্টিবডির সন্ধান করা হয়।