আজ ৩০ মে। ৭ বছর আজকের দিনেই প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই বর্ষপূর্তি তুলনামূলক ভাবে অনাড়ম্বর ভাবেই পালন করছে গেরুয়া শিবির। নেপথ্যে, অতিমারীর ধাক্কা এবং বাংলার নির্বাচনে হারের শোক। এই পরিস্থিতিতে বারংবার বিরোধীদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে সরকারকে। বিভিন্ন বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। এর জেরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার, তিন তালাক বাতিল, রাম মন্দিরের মতো জয়ের মুহূর্তগুলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়েছে বিজেপি সমর্থকদের স্মৃতিতেও। বদলে তাজা হয়েছে করোনাকালে অক্সিজেনের আকাল, টিকার অভাব, দ্বিতীয় ঢেউয়ের জেরে মৃত্যু মিছিল, গঙ্গায় ভেসে যাওয়া দেহের স্মৃতি। এবং সাম্প্রতিককালে বিজেপির জনপ্রিয়তার গ্রাফ যে নিম্নমুখী, তা মেনে নিয়েছেন দলের অন্দরের বহু নেতারা।
গতবছর করোনা আবহে তবলিঘি জামাত নিয়ে যেখানে হইচই পড়ে গিয়েছিল, সেখানে এই বছর কুম্ভ মেলার অনুমতি দিয়েছিল বিজেপি সরকার। যা পরবর্তীকালে বাধ্য হয়ে বন্ধ করতে হয়েছিল সরকারকে। এই বিষয়টি নিয়ে কম কটাক্ষ সহ্য করতে হয়নি কেন্দ্রকে। এদিকে করোনা আবহে পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে যেভাবে প্রচার চলেছে, তার জেরে দেশের করোনা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। আর এই বিষয়টি বিরোধীদের হাতে হাতিয়ার তুলে দেয়। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ক্রমাগত মুখ খুলেছেন রাহুল গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা।
গত ফেব্রুয়ারিতেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একটি রেজোলিউশন পাশ করে করোনার বিরুদ্ধে কেন্দ্রের লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছিলেন। তবে সেই সময় থেকেই করোনা নিয়ে গাছাড়া মনোভাব চলে এসেছিল দেশবাসীর মধ্যে। এবং এর দায় কিছুটা হলেও সরকারের। তবে দ্বিতীয় ঢেউয়ের মাঝে লকডাউন জারি না করা, টিকার আকাল নিয়ে সরকারের পদক্ষেপের যৌক্তিকতা বোঝাতে থাকেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে ভিতরে ভিতরে দলের মনোবলও ভাঙছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষস্থানীয় এক বিজেপি নেতা এই প্রসঙ্গে বলেন, 'এই সময়টা দলের জন্য সবথেকে বেশি হতাশাজনক। দেশের এই মৃত্যুমিছিলের দায় চাপানো হচ্ছে কেন্দ্রের ঘাড়ে। সরকারের কর্মক্ষমতা নিয়ে সাধারণ মানুষের মনোভাব রাতারাতি বদলে গিয়েছে। তাই এই সময়ে বক্তব্য পেশ থেকে বিরত থাকছে দল। এমনকি প্রধানমন্ত্রী মোদীও এই সময়কালে অত কিছু বলছেন না।'
এই আবহে আশঙ্কা করা হচ্ছে যে এই পরিস্থিতি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনগুলির উপর পড়বে। পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, মণিপুর এবং গোয়ায় নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২২ সালে। আর এই নির্বাচনের আগেই দল নিজেদের রণকৌশল ফের এখবার ঢেলে সাজাচ্ছে। মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কৌশল থেকে সরে এসে দল এখন চুপচাপ কাজ করার কৌশল অবল্বন করেছে।
এই আবহে বিজেপি কর্মীদের কোনও রকম উত্সব পালন থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তবে বিজেপি সরকারের সাফল্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কর্মীদের বলা হয়েছে। এছাড়া করোনা আবহে কোনও অবৈজ্ঞানিক পন্থা অবলম্বনের বার্তা দেওয়া থেকে দলীয় কর্মীদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে। তবে করোনা আবহে 'ব্যর্থতা' প্রসঙ্গে কোনও সাফাই দিতে বারণ করা হয়েছে কর্মীদের।
এই পরিস্থিতিতে আজকের দিনটিকে ভারতীয় জনতা পার্টি 'সেবা দিবস' হিসেবে পালন করছে বলে রবিবার জানালেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডা। করোনা আবহে দেশের ১ লক্ষ গ্রামে নেতা, মন্ত্রীদের পৌঁছতে বলা হয়েছে। তাছাড়া রক্তদান শিবিরের মতো জনসেবামূলক কর্মসূচি পালনের জন্য বলা হয়েছে কর্মীদের। এভাবেই ফের একবার মানুষের মনে জায়গা করে নিতে চাইছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।