শিশির গুপ্ত
প্রাথমিকভাবে শান্তিপূর্ণভাবে বিবাদ মেটানোর উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। তবে সবথেকে জটিল পরিস্থিতির জন্যও পূর্ব লাদাখে প্রস্তুতি সেরে রাখছে ভারত। ইতিমধ্যে গালওয়ান সেক্টরে ছ'টি টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্ক এবং অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল সিস্টেম মোতায়েন করেছে ভারতীয় সেনা।
নদী উপত্যকায় চিনা সেনা তাঁবু, সাঁজোয়া গাড়ি-সহ সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করার পর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে সক্ষম ট্যাঙ্ক পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর উঁচু এলাকাগুলি ভারতের দখলে রয়েছে। পূর্ব লাদাখে ১,৫৯৭ কিলোমিটার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর এম এম হাউইটজার-সহ ইনফ্যান্ট্রি কমব্যাট ভেহিকেল মোতায়েন করা হয়েছে। স্পাংগুর গ্যাপ দিয়ে যে কোনও রকম আগ্রাসী পদক্ষেপ রুখতে চুশুল সেক্টরেও দুটি ট্যাঙ্ক রেজিমেন্টকে তৈরি রাখা হয়েছে। এই সেক্টরে চিন যেমন চুক্তি করতে চায়, তেমনই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার উদ্দেশ্যে চিনের ওয়েস্টার্ন থিয়েটার কমান্ডের কোনও রকম সামরিক আগ্রাসনের সামনে মাথা নত করা হবে না বলে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছে ভারতীয় সেনা।
মিলিটারি কমান্ডারদের মতে, লাল পতাকা তোলা হলে ওই এলাকায় পূর্ণশক্তিতে পালটা জবাব দেবে ভারত। পাশাপাশি, নদীতে জলের তাপমাত্রা ইতিমধ্যে মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নেমে গিয়েছে এবং বৈপরীত্য তাপমাত্রার কারণে উঁচু এলাকাগুলির তুলনায় নদী উপত্যকায় তাপমাত্রা অনেকটাই কম। এলাকায় ‘সাধারণ শীত’ শুরু হতে বেশি বাকিও নেই। সেই সময় গালওয়ান উপত্যকায় চিনের অবস্থান অসহনীয় হয়ে উঠবে।
এদিকে, গালওয়ানে বর্বরের মতো অস্ত্রের ব্যবহার করেও ভারতীয় জওয়ানদের হাতে মার খেয়ে ফিরতে হওয়ার পর পূর্ব লাদাখ সেক্টরে মার্শাল আর্টে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ফৌজিদের মোতায়েন করা হয়েছে বলে ভ্রান্ত প্রচার চালাচ্ছে চিনা সেনা। কিন্তু আদতে চিনা পদাতিক ফৌজিদের মাত্র দু'বছরের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে, সেখানে ভারতীয় জওয়ানরা কমপক্ষে ১৭ বছর থাকেন। সিয়াচেন হিমবাহে নিজেদের দখলে রাখতে ১৯৮৪ সাল থেকে উঁচু এলাকায় প্রশিক্ষিত ভারতীয় জওয়ানরা। ভূপৃষ্ঠের ১৫,০০০ ফুটের বেশি উচ্চতায় কার্গিল এবং পূর্ব লাদাখ সেক্টরে মোতায়েন রয়েছেন সেনা।
এমনিতেই ভারতীয় জওয়ানদের মনোবল তুঙ্গে রয়েছে। চরম সতর্ক রয়েছে বায়ুসেনা এবং নৌবাহিনীও। অন্যদিকে, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার দূরে তাকলামাকান মরুভূমিতে হোতান বায়ুঘাঁটিতে চিনা বায়ুসেনার অধিকাংশ যুদ্ধবিমান রয়েছে। সেখান থেকেই উড়ছে যুদ্ধবিমানগুলি। ভারতীয় যুদ্ধবিমানের জন্য সারফেস-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রও মোতায়েন করেছেন বেজিং। যদিও পালটা প্রস্তুত রয়েছে ভারত।