বাস্তব জীবনে আপনি কতটা খুশি, তাই দিয়ে কিছু যায় আসে না। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় আপনার ছবি যেন প্রাচুর্য্য, আনন্দে ভরা থাকে। আপনার জীবনযাত্রা দেখে যেন বাকিদের ঈর্ষা হয়।
বর্তমান প্রজন্মের একটি বড় অংশ এখন এই ভাবনা নিয়েই চলছে। যে কোনও উপায়ে নিজের বৈভব, সাফল্যের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরাই যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে সারল্য, সাধারণ জীবনযাপনের কোনও অস্তিত্বই নেই।
তবে এই মেকি সাফল্যের ছবি তুলে ধরতে গিয়ে কঠিন পথেও হেঁটেছেন বহু ইনফ্লুয়েন্সার। কেউ কেউ বিলাসবহুল গাড়ি ধার করেই তার সামনে ছবি দেন। আবার ধার-দেনা করেও অনেকে কিনে ফেলেন দামি স্মার্টফোন, মোটরসাইকেল। আরও পড়ুন: রায়গড়ে ২২ বছরের সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সরের দেহ উদ্ধার, তদন্তে পুলিশ
তবে মিথ্যাচারের সমস্ত সীমাই পেরিয়ে গেলেন মার্কিন মুলুকের এক ইনফ্লুয়েন্সার। কোভিড ত্রাণ বাবদ বিপুল টাকা নিয়ে তাই দিয়ে দামি গাড়ি, শপিং করছিলেন এক তরুণী। মায়ামির ড্যানিয়েলা রেন্ডন নামের ওই তরুণীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে সেদেশের বিচার বিভাগ।
কীভাবে পেলেন এতগুলো টাকা?
করোনার সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এক নতুন সরকারি প্রকল্পের ঘোষণা করা হয়। তাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসাগুলিকে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছিল। এর মাধ্যমে মহামারীতে বন্ধ হয়ে থাকা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিকে খরচ চালানো, কর্মীদের বেতন দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়। নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ড্যানিয়েলা নামের ওই তরুণীও নিজের ব্যবসা চালানোর জন্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। আর তার ভিত্তিতেই ধাপে ধাপে পান ৩,৮১,০০০ মার্কিন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৩ কোটি ১৪ লক্ষ টাকা।
এত বিপুল পরিমাণ টাকা হাতে আসতেই মাথা ঘুরে যায় তরুণীর। অভিযোগ, সেই টাকা ব্যবসায় খরচ না করে, নিজের জন্য বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও দামি বেন্টলি বেন্টেইগা গাড়ি কিনে নেন। বাকি যে টাকা পড়ে ছিল, তাই দিয়ে ডিজাইনার জুতো, ব্যাগ, পোশাক, কসমেটিক্স শপিং করে ওড়াচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, কসমেটিক সার্জারিও করেছিলেন এই টাকা দিয়েই।
আদতে কিন্তু ড্যানিয়েলার কোনও ব্যবসাই ছিল না। রিয়েল এস্টেট ব্যবসার নকল নথি তৈরি করে জমা দিয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর নকল বেতন প্রদানের হিসাব, ব্যালেন্স শিট জমা দিতেন।
একজন সাধারণ নার্স থেকে কোটিপতি দালাল
ড্যানিয়েলা কিন্তু একজন প্রশিক্ষিত নার্স। আদতে কলম্বিয়ান এই তরুণী ২০১৪-১৭ সাল নার্স হিসাবে কাজ করেছেন। কিন্তু বিলাসবহুল জীবনযাপনের নেশা থেকেই সেই চাকরি ছেড়ে দেন। শুরু করেন রিয়েল এস্টেট-এর ব্যবসা। সুন্দরী হওয়ায় তাঁর সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার ছিল অনেক। সেটাকেই তিনি কাজে লাগান। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি রিয়েল এস্টেট এজেন্ট হিসাবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। সহজ বাংলায় দামি বাড়ি-ফ্ল্যাটের দালাল।
সোশ্যাল মিডিয়াতেই নিজের অস্বাভাবিক বিলাসবহুল জীবনযাত্রা দেখাতেন ড্যানিয়েলা। কখনও দেখা যেত কোটি টাকার গাড়িতে বসে হাসছেন। কখনও বা বাড়িতেই লাখ টাকার জুতো পরে আছেন।
তবে ড্যানিয়েলা বেশ বুদ্ধিমতিও ছিলেন। এমন দুর্নীতির ক্ষেত্রে সাধারণত লোকে উজ্জ্বল রঙের ল্যাম্বরগিনি বা ফেরারি জাতীয় স্পোর্টসকার কিনে ফেলেন। আর সেটা করলেই তাঁরা আয়কর বিভাগের নজরে এসে যান। সম্ভবত সেই কারণেই কিনেছিলেন বেন্টলি বেন্টেইগা। অত্যন্ত দামি এই SUV-ও বেশ বিলাসবহুল। কিন্তু চট করে কারও নজরে পড়বে না। তবে শেষ রক্ষা হল না। ফেডেরাল আধিকারিকরা একটু খতিয়ে দেখতেই ধরা পড়ে যান তিনি।
গ্রেফতার হওয়ার পরপরই নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলিও প্রাইভেট করে দিয়েছেন ড্যানিয়েলা। আরও পড়ুন: ‘হকারি’ করে ১০টা বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, ১.৫ কেজি সোনা, জানুন আসল রহস্য
এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup