মণীশ কে পাঠক
অবসরের পরও ছোটো মেয়েটার ছবি ওয়ালেটে রেখে দিয়েছিলেন। নিজের আওতায় থাকা এলাকার সব হারিয়ে যাওয়া শিশুদের উদ্ধার করেছিলেন। কিন্তু সেই ছোট্টো মেয়ের কোনও খোঁজ পাননি। অবশেষে নয় বছর পরে বাড়িতে ফিরলেন সেদিনের সেই ‘ছোটো’ মেয়ে পূজা গৌড়। এখন তাঁর বয়স ১৬।
বছর ১৬-র পূজাকে যখন অপহরণ করা হয়েছিল, তখন সে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ত। ২০১৩ সালের ২২ জানুয়ারি দাদা রোহিতের সঙ্গে স্কুলে যাওয়ার সময় আচমকা উধাও হয়ে গিয়েছিল। যেখান থেকে পূজাদের বাড়ির দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয়। ১৯ বছরের রোহিত জানান, পুরসভার স্কুলে যাওয়ার সময় তিনি কিছুটা সামনে ছিলেন। পিছনে হেঁটে-হেঁটে যাচ্ছিলেন পূজা। কিছুক্ষণ পর পিছনে তাকিয়ে বোনকে আর দেখতে পাননি। স্কুলেও বোনকে দেখতে না পেয়ে দৌড়ে বাড়ি চলে আসেন।
কোথাও ছোট্ট পূজার সন্ধান না পেয়ে ডিএন নগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। সেইসময় ওই থানায় নিখোঁজদের উদ্ধারের দায়িত্বে ছিলেন অ্যাসিসট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর রাজেন্দ্র ভোঁসলে। ২০১৫ সালে অবসরের আগে পর্যন্ত ভোঁসলে এবং তাঁর দল নিখোঁজ সমস্ত শিশুকে উদ্ধার করেছিল। শুধুমাত্র পূজার হদিশ মেলেনি। ওয়ালেটে পূজার ছবি রেখে দিতেন ভোঁসলে। অবসরের পরও ওয়ালেটে থাকত পূজার ছবি।
শেষপর্যন্ত অবশ্য পূজাকে খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ। বরং অপর এক ব্যক্তির সুবাদেই পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন পূজা। কিশোরী জানিয়েছেন, তাঁকে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে থাকে অপহরণকারী হ্যারি ডি'সুজা এবং সোনি। মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গার পাশাপাশি তাঁকে গোয়া এবং কর্ণাটকেও নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে মুম্বইয়ে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল তাঁকে। কারও কাছে মুখ খুললে পাহাড় থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন পূজা।
১৬ বছরের তরুণী জানান, স্কুলে পাঠানো হত। ঠিকভাবে খেতেও দিত ডি'সুজা দম্পতি। কিন্তু তাদের সন্তান হওয়ার পরেই ছবিটা পালটে যায়। বাড়ির বাইরে যেতে দেওয়া হত না। জেলের মতো মনে হত। মারধরও করত ডি'সুজা দম্পতি। তারইমধ্যে ওই দম্পতি পূজাকে জুহুতে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে কাজ করতে বাধ্য করেছিল। সেখানেই ৩৫ বছরের এক পরিচারকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ওই ব্যক্তির কারণেই বাড়ি ফিরতে পেরেছেন পূজা।
ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন, অ্যানি (অপহরণের পর পূজাকে ওই নামে ডাকা হত) বলতেন যে তিনি আসলে সোনির মেয়ে নন। তাঁর আসল মা অন্য কেউ। তাতেই সন্দেহ তৈরি হয়েছিল। তারপর গুগলে সার্চ করতে থাকেন। পূজা বলে সার্চ করতেই পুরনো ছবি দেখতে পান। পূজার নিখোঁজ পোস্টারে যে চারটি নম্বর দেওয়া হয়েছিল, একটি নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন। যিনি আদতে পূজার প্রতিবেশী। তারপর পূজাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ডি'সুজা দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: Sohom-Arpita: ‘মহানায়ক’ সোহমের সঙ্গে ‘মহা চোর’ অর্পিতার অনস্ক্রিন রোম্যান্স, ভিডিয়ো Viral
সেই খবর পাওয়ার পর মুম্বই থেকে দূরে রত্নাগিরি জেলার বাড়ি থেকে ভোঁসলে বলেন, ‘আমি এখনও ওয়ালেটে ওর ছবি রেখে দিই। অবসরের পরও প্রতিদিন ওর কথা ভাবতাম। প্রার্থনা করতাম, যাতে ওকে খুঁজে পাওয়া যায়। এবার আমি খুশি। কোনও চিন্তাভাবনা ছাড়া আরাম করতে পারব।’